অথবা, `ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ
নীতির তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতির প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজকর্ম অনুশীলনের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। এর মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার সুপ্ত প্রতিভা ও সম্ভাবনা বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক ভূমিকা পালন, ক্ষমতার পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। ব্যক্তি সমাজকর্ম সমাজকর্মের একটি মৌলিক পদ্ধতি। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সাহায্য করার জন্য পেশাদার সমাজকর্মীগণ যে পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন তাই হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। ব্যক্তি সমাজকর্মের মুখ্য উপাদান হলো ব্যক্তি।
ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতির গুরুত্ব : ব্যক্তি সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতি। নিম্নে ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতির গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা : ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতি ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে।
যহেতু সমস্যাটি ব্যক্তির এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারপ্রাপ্ত হয়। নিজের তাই সমস্যা সমাধানে তার মতামতই প্রাধান্য পাবে।
২. ব্যক্তিস্বাধীনতার মর্যাদা : প্রত্যেক ব্যক্তির রয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি চর্চার মধ্যে ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষিত হয়। ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষিত না হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না। ব্যক্তি সমাজকর্ম ব্যক্তির স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং তার মর্যাদা দেয়।
৩. ব্যক্তির আত্মপ্রত্যয় : সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস জাগ্রতকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কারণ সমস্যা সমাধানে ব্যক্তির দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে এবং তাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে না পারলে তাকে সমস্যার মধ্য থেকে বের করে আনা যাবে না।
৪. সাহায্যার্থীর মর্যাদা সংরক্ষণ : আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সাহায্যার্থীর আত্মমর্যাদাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। সাহায্যার্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় বলে নিজেকে মর্যাদাবান মনে করে। এতে তার ভিতর আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয় এবং এক্ষেত্রে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করার চেষ্টা করে।
৫. সমস্যার সহজ সমাধান : আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতির চর্চা আছে বলেই ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যার সমাধান সহজ হয়। এর কারণ সাহায্যার্থী ব্যক্তি এক্ষেত্রে নিজেই সমস্যা সমাধানের রূপরেখা প্রণয়নে সহায়তা করতে পারে এবং সমস্যার সহজ সমাধানে পৌঁছাতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ব্যক্তি সমাজকর্মে গ্রহণনীতি ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতি এ দুটির কোনটিরই গুরুত্ব কম নয়। সাহায্যার্থীর ভয়ভীতি দূর করে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রচনা, সাহায্যার্থীর সাময়িক মানসিক তৃপ্তি লাভ, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তি স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রহণনীতির গুরুত্বকে অস্বীকার করার
কোন উপায় নেই। আবার ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তি সমাজকর্মের গুরুত্বও কম নয়। এ প্রসঙ্গে এফ. পি বিসটেক বলেন, Individualization is based upon the right of human beings to be individuals and to be treated not just a human beings but this human with personal differences.”