Download Our App

বৌদ্ধ দর্শনে মাধ্যমিক সম্প্রদায় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, মাধ্যমিক সম্প্রদায় কী?
অথবা, মাধ্যমিক সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ।
অথবা, মাধ্যমিক সম্প্রদায় বলতে বৌদ্ধ দর্শনের কোন সম্প্রদায়কে বুঝায়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নগরে এক রাজপরিবারে গৌতমবুদ্ধের জন্ম হয়। গৌতমবুদ্ধ জৈনধর্ম ও দর্শনের মুখ্য প্রতিষ্ঠাতা মহাবীরের সমসাময়িক। রাজকীয় ঐশ্বর্যের মধ্যে লালিতপালিত হলেও বাল্যকাল হতে গৌতমবুদ্ধ চিন্তাশীল ও বৈরাগ্য ভাবাপন্ন ছিলেন। তাঁর বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি
করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠে সেই মতবাদই হলো বৌদ্ধ দর্শন।
বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায় : বুদ্ধদেবের শিষ্যগণ তাঁর দার্শনিক মতবাদের বিভিন্নভাবে আলোচনা করেন। ফলে প্রায় ত্রিশটি বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। তবে ভারতীয় দর্শনে চারটি সম্প্রদায়ের বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন-
১. মাধ্যমিক সম্প্রদায়, ২. যোগাচার সম্প্রদায়, ৩. সৌত্রান্তিক সম্প্রদায় এবং ৪. বৈভাষিক সম্প্রদায়। মাধ্যমিক সম্প্রদায় বা শূন্যবাদ : খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে নাগার্জুন জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়ে তিনি হলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক। তিনিই হলেন, মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের প্রবর্তক। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম হলো ‘মাধ্যমিককারিকা’। যারা নাগার্জুনের এই গ্রন্থের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাদের মধ্যে চন্দ্ৰকীতি অন্যতম। মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের দার্শনিক মতবাদের নাম হলো শূন্যবাদ। এ মতবাদ অনুসারে বাহ্যবস্তু, মানসিক প্রক্রিয়া এমনকি সবকিছুই শূন্য। বস্তু বা মন বলে কোনকিছুরই সত্তা নেই। জড়জগৎ এবং মনোজগৎ উভয়ই মিথ্যা। মাধ্যমিকগণ তাদের মতবাদের সমর্থনে অনেক যুক্তি দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং জ্ঞান এই তিনটি বিষয় পরস্পর নির্ভরশীল। এ তিনটির মধ্যে একটিরও যদি অস্তিত্ব না থাকে বা একটি যদি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়, তাহলে অপরগুলোও মিথ্যা, হতে বাধ্য। কোন ব্যক্তির সন্তানের অস্তিত্বের বিয়টি যদি মিথ্যা হয় তাহলে তার পিতৃত্বও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। যখন আমরা দড়িকে সাপ বলে জানি তখন প্রকৃতপক্ষে সাপের কোন অস্তিত্ব নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মাধ্যমিক সম্প্রদায় বুদ্ধের আচরণ ও বাণীর বিশ্লেষণ দ্বারা সমগ্র ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারার এক গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব ঘটিয়েছে। মূলত মাধ্যমিক চিন্তার প্রভাবেই বৌদ্ধদর্শন একটি আধ্যাত্মিকমূলক ধর্মে পরিণত হয়েছে। কাজেই মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের দর্শনতত্ত্ব তথা শূন্যবাদ ভারতীয় দর্শনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।