Download Our App

বৌদ্ধ দর্শনে চারটি আর্যসত্য লিখ ।

অথবা, বুদ্ধের চারটি আর্যসত্য সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “আর্যসত্য চতুষ্টয়” সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, গৌতম বুদ্ধের আর্যসত্যগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
বুদ্ধদেব (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) ছিলেন সত্যদ্রষ্টা সাধক। তিনি মানুষের জীবনের দুঃখ দুর্দশার হাত হতে চিরমুক্তি লাভের আশায় দীর্ঘদিন সাধনা করেছিলেন। পরে দীর্ঘ সাধনায় তিনি যে জ্ঞান লাভ করেন তা চারটি আর্যসত্য নামে খ্যাত। বুদ্ধদেবের সকল উপদেশ এ চারটি সত্যের মাঝেই নিহিত।
আর্যসত্য : বুদ্ধদেবের চারটি আর্যসত্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
প্রথম আর্যসত্য-দুঃখ আছে : গৌতম বুদ্ধের প্রথম আর্যসত্যটি হলো দুঃখ আছে। এ সংসার দুঃখময়। সর্বং দুঃখম্-সবই দুঃখময়। জন্ম, জরা, রোগ, মরণ, শোক, উদ্বেগ, আকাঙ্ক্ষা, অপ্রিয় সংযোগ, প্রিয় বিচ্ছেদ সবই দুঃখের
বিষয়বস্তু। যা ইচ্ছা করে লাভ করা যায় না তাই দুঃখ, সংক্ষেপে যা কিছু আসক্তিপ্রসূত তাই দুঃখময়। এ সংসারে জীব ব্যাধি, জরা ও মৃত্যুর অধীন। সকল বস্তুই ক্ষণস্থায়ী। এগুলোই দুঃখের সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় আর্যসত্য – দুঃখের কারণ আছে : গৌতম বুদ্ধের দ্বিতীয় আর্যসত্যটি হলো দুঃখের কারণ আছে। প্রতীত্য সমুৎপাদ বা কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তির উপরই দ্বিতীয় আর্যসত্যটি প্রতিষ্ঠিত। প্রতীত্য সমুৎপাদ নিয়মানুসারে এ জগতে কোন কিছুই অকারণে ঘটতে পারে না। প্রত্যেক ঘটনাই কোন পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে উদ্ভূত। সুতরাং দুঃখও অকারণে ঘটতে
পারে না, এ দুঃখের কারণ আছে। ব্যাধি, জরা, মরণ, নৈরাশ্য, শোক অর্থাৎ সংক্ষেপে এ জরামরণের কারণ হলো জাতি বা জন্ম ।
তৃতীয় আর্যসত্য-দুঃখের নিরোধ বা নিবৃত্তি আছে : গৌতম বুদ্ধের তৃতীয় আর্যসত্যটি হলো দুঃখের নিরোধ বা নিবৃত্তি আছে। যেহেতু প্রতিটি কার্যেরই কারণ আছে, সেহেতু দুঃখের কতকগুলো কারণ আছে এবং যদি এ কারণগুলো ধ্বংস করা যায় তাহলেই দুঃখের নিরোধ বা নিবৃত্তি সম্ভব। বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখ নিরোধকেই নির্বাণ নামে অভিহিত করা হয়।
চতুর্থ আর্যসত্য-দুঃখ নিরোধ মার্গ বা পথ আছে : গৌতম বুদ্ধের চতুর্থ আর্যসত্যটি হলো দুঃখ নিরোধ মার্গ বা পথ আছে। এ দুঃখ নিরোধের মার্গ বা পথ অনুসরণ করে দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ করা যেতে পারে। এ পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বস্তুত এ অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যেই বৌদ্ধ দর্শনের নীতিতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গৌতম বুদ্ধ গভীর ধ্যান বা তপস্যা করে যে চারটি আর্যসত্যের সন্ধান পান তা দার্শনিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।