বৈষম্যমূলক দাম নীতি কি বাঞ্চনীয়?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, মূল্য বৈষম্যকরণের সুবিধা কি? অথবা, মূল্য বৈষিম্যকরণের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

উত্তর: বৈষম্যমূলক দামনীতি বাঞ্চনীয় কিনা বা কতটুকু যুক্তিঙ্গত এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনোপলিস্টের পক্ষে বৈষম্যমূলক সামনীতি যুক্তিসঙ্গত বলা যায়। এগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ-

১. মূল্য বৈষম্যের ফলে কম দামে বেশি উৎপাদন করা সম্ভব।

২. বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো শিল্পকে টিকে রাখার জন্য মূল্য বৈষম্য প্রয়োজন

৩. মূল্য বৈষম্য প্রথম মাত্রার হলে মূল্য বৈষম্যকারীর দাম ও উৎপাদন প্রতিযোগী ফার্মের সমান হয়।

৪. বিশেষ প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন সম্ভব।

৫. সম্পদের বণ্টনে মূল্য বৈষম্যের সাফল্য।

৬. সামাজিক ক্ষমতা রক্ষা।

৭. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।

৮. বেশি উৎপাদন ও অধিক বিক্রয়।

নিম্নে এগুলোর বর্ণনা করা হলো-

১. মূল্য বৈষম্যের ফলে কম দামে বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। মূল্য বৈষম্য প্রথম মাত্রার বা বিশুদ্ধ হলে সাধারণ। মনোপলি অপেক্ষা মূল্য বৈষম্যকারী মনোপলি বেশি উৎপাদন কবে এবং কম দাম দাবি করে।

২. বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন শিল্পকে টিকে রাখার জন্য মূল্য বৈষম্য প্রয়োজনঃ কোনো সামাজিক অত্যাবশ্যক দ্রব্যের বাজারে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হতে পারে যে ব্যয় পরিস্থিতি উৎপাদকের প্রতিকূলে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় শিল্প লোকসানের স্বীকার হবে। ফলে শিল্প টিকে থাকার জন্য মূল্য বৈষম্যের মাধ্যমে ধনীদের নিকট বেশি দাম এবং দরিদ্রদের নিকট কম দাম দাবির মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে।

৩. মূল্য বৈষম্য প্রথম মাত্রার হলে মূল্য বৈষম্যকারীর দাম ও উৎপাদন প্রতিযোগী ফার্মের সমান হয়ঃ সাধারণত মনে করা হয় যে মূল্য বৈষম্যকারী মনোপলি ভোক্তাদের শোষণ করে। অথচ মূল্য বৈষম্য প্রথম মাত্রার হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের মতো এই বাজারের মূল্য ও উৎপাদন নির্ধারিত হয়।

৪. বিশেষ প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন সম্ভবঃ বাস্তবে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি বায় প্রতিকূল হতে পারে। এক্ষেত্রে উৎপাদকের নিশ্চিত লোকসানের জন্য সে উৎপাদন করবে না। এখন যদি বিক্রেতাকে মূল্য বৈষম্যের সুযোগ দেয়া হয়, তবে সে বাজার চাহিদা অনুযায়ী মূল্য বৈষম্য করে কোন বাজারে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন আবার কোন বাজারে লোকসান খেয়ে বাজারে টিকে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে মূল্য বৈষম্য কল্যাণকর।

৫. সম্পদের বণ্টনে মূল্য বৈষম্যের সাফল্য: বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বেলায় মুল্য বৈষম্যের ফলে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে সম্পদের বণ্টন সুষম হয়। যেমন- একজন ডাক্তার বা আইনজীবি গ্রামাঞ্চলে কম ফি এবং শহরাঞ্চলে বেশি ফি নিয়ে পরামর্শ প্রদান করতে পারে। আবার বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল আবাসিক ও বাণিজ্যিক চার্জ পৃথকের মাধ্যমে সম্পদ বণ্টন ক্ষমতা আনয়ন সম্ভব।

৬. সামাজিক ক্ষমতা রক্ষাঃ বিশেষ বিশেষ দ্রব্যের জন্য মূল্য বৈষম্য না করলে তা সমাজের দরিদ্র শ্রেনীরা ভোগ হতে বঞ্চিত হতে পারে। যেমন- রেলওয়ে এর টিকেটের দাম বিভিন্ন হয়। এভাবে দাম বৈষম্যের ফলে দরিদ্ররাও তা ভোগ হতে বঞ্চিত হবে না।

৭. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: মূল্য বৈষম্যের মাধ্যমে উৎপাদিত দ্রব্য আন্তঃবাজারে বেশি দামে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে বিক্রির ফলে বৈদেশিক বাজার হতে বেশি আয় হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন বেশি বৃদ্ধি পাবে।

৮. বেশি উৎপাদন ও অধিক বিক্রয়: মনোপলি তার সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে মূল্য বৈষম্যের কৌশল গ্রহণ করে। ফলে উৎপাদন বিক্রয় উভয় বৃদ্ধি পায়।

উপসংহারঃ মূল্য বৈষম্যের পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক যুক্তি দেয়া সম্ভব। তবে অধ্যাপক J. Robison মনে করেন, ‘সাধারণ মনোপলির চেয়ে মূল্য বৈষম্য ঐসব ক্ষেত্রে পছন্দনীয় বলা যায় যেখানে তা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক। যদি দেখা যায় কোনো ক্ষেত্রে মূল্য বৈষম্য দ্বারা সমাজের গরীবরা বেশি উপকৃত এবং এর মাধ্যমে সামাজিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তবে সেক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী হলেও ত্রুটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে।