বৈশেষিক মতে মনের অস্তিত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈশেষিক মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈশেষিকদের যুক্তি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মনের অস্তিত সম্পর্কে বৈশেষিক দার্শনিকগণ কী বলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
বৈশেষিক দর্শনের মূল গ্রন্থের নাম হলো বৈশেষিক সূত্র। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ । বৈশেষিক সূত্র নামক এ মূল গ্রন্থটি দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এবং প্রতিটি অধ্যায়ের আবার দুটি করে পরিচ্ছেদ আছে। প্রশস্তপাদ-এর ‘পদার্থধর্মসংগ্রহ’ বৈশেষিক দর্শনের উপর একটি প্রামাণিক গ্রন্থ। বৈশেষিক মতে, পদার্থ সাত প্রকারের এবং সব পদার্থই জ্ঞানের বিষয় বা প্রমেয়। বৈশেষিক সাত প্রকারের পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. ভাবপদার্থ এবং খ. অভাবপদার্থ। সকল অস্তিত্বশীল বস্তু ভাবপদার্থ। যেমন- দ্রব্য, গুণ ইত্যাদি। বৈশেষিক স্বীকৃত সাতটি পদার্থের দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায় এ ছয়টি ভাবপদার্থ ।
মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈশেষিক মত : বৈশেষিকগণের মতে, মন একটি নিত্য দ্রব্য। এটি অতি সূক্ষ্ম এবং অণুপরিমাণ । মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈশেষিকদের যুক্তিগুলো নিম্নরূপ :
প্রথমত, বাহ্যবস্তু প্রত্যক্ষ করার জন্য যেমন বাইরের ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন তেমনি সুখ, দুঃখ, দ্বেষ প্রভৃতি আন্তর বার জন্য অন্তরিন্দ্রিয়ের প্রয়োজন বলে বৈশেষিকগণ মনে করেন। এই অন্তরিন্দ্রিয়ই হলো মন।
অবস্থাকে
দ্বিতীয়, পঞ্চ বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাথে যদিও একই সময়ে তাদের নিজস্ব বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটে তবুও একই সময়ে • সবগুলোকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয় না। কারণ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগ ঘটলেই প্রত্যক্ষ হয় না। আরো একটি জিনিসের প্রয়োজন আছে এবং সেই জিনিসটিই হলো মনোসংযোগ। যেমন- আমার হাত দুটি টেবিলের উপর রেখে আমি ছবি দেখছি, টেবিলের উপর একটি গন্ধযুক্ত গোলাপ ফুলও আছে। মুখে একটি চকলেট দিয়েছি, আর পাশের ঘরে একটি রেডিও চলছে। এখানে একই সময়ে সব বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তাদের বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটেছে। কিন্তু আমি প্রত্যক্ষ করতে পারি কেবল একটিকে যার প্রতি আমি মনোযোগী হয়েছি। কাজেই মনের অস্তিত্ব স্বীকার করতেই হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈশেষিকদের পদার্থ সম্পর্কীয় মতবাদে মন ও মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা দর্শনের আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।