অথবা, বৈশেষিক মতে দ্ৰব্য কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, বৈশেষিকদের আলোকে দ্রব্যের শ্রেণিবিভাগ লেখ।
অথবা, বৈশেষিক দর্শনের দ্রব্যের প্রকারভেদ দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : বৈশেষিক দর্শনের মূল গ্রন্থের নাম হলো বৈশেষিক সূত্র। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ । বৈশেষিক সূত্র নামক এ মূল গ্রন্থটি দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এবং প্রতিটি অধ্যায়ের আবার দুটি করে পরিচ্ছেদ আছে। প্রশস্তপাদ-এর ‘পদার্থধর্মসংগ্রহ’ বৈশেষিক দর্শনের উপর একটি প্রামাণিক গ্রন্থ। বৈশেষিক মতে, পদার্থ সাত প্রকারের এবং সব পদার্থই জ্ঞানের বিষয় বা প্রমেয়। বৈশেষিক সাত প্রকারের পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. ভাবপদার্থ এবং খ. অভাবপদার্থ। সকল অস্তিত্বশীল বস্তু ভাবপদার্থ। যেমন- দ্রব্য, গুণ ইত্যাদি। বৈশেষিক স্বীকৃত সাতটি পদার্থের দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায় এ ছয়টি ভাবপদার্থ ।
দ্রব্যের প্রকারভেদ : বৈশেষিক মতে, যে পদার্থকে আশ্রয় করে গুণ ও কর্ম অবস্থান করে সে পদার্থকে দ্রব্য বলা হয়। গুণ মাত্রেই কোন না কোন দ্রব্যের গুণ এবং কর্ম মাত্রেই কোন না কোন দ্রব্যের কর্ম। গুণ এবং কর্ম ছাড়া দ্রব্য থাকতে পারে না। বৈশেষিকগণের মতে, দ্রব্য নয় প্রকার। যথা :
১. ক্ষিতি,
২. অপ্ (পানি),
৩. তেজ,
৪. মরুৎ (বায়ু),
৫. ব্যোম (আকাশ),
৬. দিক (দেশ)
৭. কাল,
৮. আত্মা ও
৯. মন।
এই নয় প্রকার দ্রব্যের প্রথম পাঁচটিকে [১. ক্ষিতি, ২. অপ (পানি), ৩. তেজ, ৪. মরুৎ (বায়ু) এবং ৫. ব্যোম (আকাশ)] পঞ্চভূত বলা হয়। এই পঞ্চভূতের প্রত্যেকটির এক একটি বিশেষ গুণ আছে। যেমন- ক্ষিতির বিশেষ গুণ হলো গন্ধ, অপের (পানির) বিশেষ গুণ হলো স্বাদ, তেজের বিশেষ গুণ হলো রূপ, মরুৎ বা বায়ুর বিশেষ গুণ হলো স্পর্শ এবং ব্যোম বা আকাশের বিশেষ গুণ হলো শব্দ। বৈশেষিক মতে, আমাদের বাইরের ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে এই গুণগুলোকে প্রত্যক্ষ করা যায়। বৈশেষিক মতে, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ আবার দুই প্রকার; যথা : ১. নিত্য (Eternal) ও ২. অনিত্য
(Non-eternal)।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈশেষিকদের পদার্থ সম্পর্কীয় মতবাদে দ্রব্য সম্পর্কে যে আলোচনা ও শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে তা দর্শনের আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।