অথবা, কর্ম সম্পর্কে বৈশেষিক মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বৈশেষিক মতে কর্ম বলতে কী বুঝ? কর্ম কত প্রকার ও কী কী? আলোচনা কর।
অথবা, বৈশেষিকদের কর্মের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এ ছয়টি দর্শন সম্প্রদায়কে ভারতীয় দর্শনে আস্তিক সম্প্রদায় বলা হয়। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ। মহর্ষি কণাদের প্রকৃত নাম উলুক। কণাদ ও উলুক—এই দুই নাম অনুসারে তাঁর প্রণীত দর্শন ‘কণাদ দৰ্শন’ বা ‘ঔলুক্য দর্শন’ নামে পরিচিত। এই দর্শনে ‘বিশেষ’ নামে
একটি পদার্থ স্বীকার করায় এর নাম বৈশেষিক দর্শন হয়েছে। বৈশেষিক মতে, পদার্থ সাত প্রকারের এবং সব পদার্থই জ্ঞানের বিষয় বা প্রমেয়। বৈশেষিক সাত প্রকারের পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ক. ভাবপদার্থ এবং খ. অভাবপদার্থ। সকল অস্তিত্বশীল বস্তু ভাবপদার্থ। যেমন- দ্রব্য, গুণ ইত্যাদি। বৈশেষিক স্বীকৃত সাতটি পদার্থের দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায় এ ছয়টি ভাবপদার্থ।
কর্ম (Action) : বৈশেষিক মতে, জড়পদার্থের গতিই হলো কর্ম। গুণের মতো কর্মেরও আশ্রয় হলো দ্রব্য। কর্ম গুণ ও দ্রব্য হতে ভিন্ন। কর্মের কোন গুণ নেই। কর্ম ও গুণের মধ্যে পার্থক্য এই যে, কর্ম গতিশীল ও সক্রিয় আর গুণ স্থিতিশীল ও নিষ্ক্রিয়। কর্ম হলো ক্ষণিক আর গুণ হলো স্থায়ী। কর্মের জন্যই দ্রব্যের সংযোগ ও বিভাগ সম্ভব হয়। মহর্ষি কণাদ কর্মের
সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, “কর্ম হলো তা যা দ্রব্যে অবস্থান করে অথচ গুণ নয়, এবং যা দ্রব্যের সংযোগ ও বিভাগের প্রত্যক্ষ কারণ।
বৈশেষিক মতে, কর্ম দ্রব্যেই অবস্থান করে বটে। তবে সব দ্রব্যের কর্ম থাকে না। যেমন- আকাশ, দিক (দেশ), কাল ও আত্মা অমূর্ত ও সর্ব ব্যাপী দ্রব্য বলে এদের কর্ম নেই। কেবল সীমিত ও মূর্ত দ্রব্যে কর্ম অবস্থান করে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈশেষিকদের পদার্থ সম্পৰ্কীয় মতবাদে কর্ম সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা দর্শনের আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।