বৈশেষিক পরমাণুবাদের স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, বৈশেষিক পরমাণুবাদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বৈশেষিক পরমাণুবাদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা কর।
অথবা, বৈশেষিকদের পরমাণুবাদের প্রকৃতি কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ঋষি কণাদ। এ দর্শনের নাম বৈশেষিক দর্শন। যেহেতু এ দর্শনে ‘বিশেষ’ নামে একটি পদার্থ স্বীকার করা হয়েছে। কণাদের বৈশেষিক সূত্র বৈশেষিক দর্শনের প্রথম রচনা। বৈশেষিক দর্শনের উপর বিভিন্ন রচনা রয়েছে। বৈশেষিক দর্শনের বিভিন্ন আলোচ্যবিষয়ের মধ্যে বৈশেষিক পরমাণুবাদ বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। নিম্নে বৈশেষিক পরমাণুবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
বৈশেষিক পরমাণুবাদের স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য : বৈশেষিকদের মতে, আকাশ, কাল, দিক এবং আত্মা এ চারটি দ্রব্য এবং বিভু বা সর্বব্যাপী, মন নিত্য দ্রব্য, কিন্তু মন পরমাণু বিশেষ; ক্ষিতি হলো তেজ এবং বায়ু এ চারটি দ্রব্যের পরমাণু নিত্য। এছাড়া জগতের সব দ্রব্যই অনিত্য। এ জগতের যাবতীয় উৎপত্তিশীল দ্রব্যের মৌলিক উপাদান হলো পরমাণু। যে কোন যৌগিক বস্তুকে ক্রমাগত বিভাগ করে চললে, সর্বশেষে যেসব অতি সূক্ষ্ম ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণিকা পাওয়া যায়, তাদের নামই পরমাণু।
১. পরমাণুগুলো প্রত্যক্ষযোগ্য নয় : পরমাণুগুলো এত ক্ষুদ্র যে, এদের প্রত্যক্ষ করা যায় না, তবে অনুমানের সাহায্যে এদের অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায়; যেমন- যৌগিক দ্রব্য মাত্রেই অংশের সমষ্টি। অংশেরও আবার অংশ আছে। এভাবে চলতে থাকলে এমন কতকগুলো অংশ পাওয়া যাবে যাদের আর অংশ নেই। এ অংশহীন অংশগুলোই পরমাণু। সুতরাং পরমাণুর অস্তিত্ব আছে।
২. পরমাণুগুলো নিত্য : পরমাণুগুলো নিত্য, যেহেতু এদের সৃষ্টি নেই আর বিনাশও নেই। পরমাণুর কোন সৃষ্টি নেই, যেহেতু সৃষ্টির অর্থই হলো কতকগুলো অংশকে সংযুক্ত করা। পরমাণু যেহেতু অংশহীন তার সৃষ্টির প্রশ্নই উঠে না। পরমাণুর বিনাশ নেই। যেহেতু কোন দ্রব্যকে বিনাশ করার অর্থ হলো তার অংশগুলোকে বিযুক্ত করা। কিন্তু যার অংশ নেই, তার অংশগুলোকেই বিযুক্ত করার প্রশ্ন উঠে না।
৩. পরমাণুগুলো যাবতীয় যৌগিক দ্রব্যের উপাদান কারণ : পরমাণুগুলো যাবতীয় যৌগিক দ্রব্যের উপাদান কারণ, যেহেতু বিভিন্ন পরমাণু সংযোগে যাবতীয় জড়বস্তুর সৃষ্টি। আর ঈশ্বর হলেন যাবতীয় যৌগিক দ্রব্যের নিমিত্ত কারণ। যেহেতু ঈশ্বরই পরমাণুগুলোতে গতি সঞ্চার করে তাদের সক্রিয় করেন।
৪. পরমাণু সংখ্যায় বহু এবং পরস্পর পৃথক : পরমাণু সংখ্যায় বহু এবং পরস্পর পৃথক। পরমাণুগুলোর পরিমাণগত পার্থক্য নেই, তবে গুণগত পার্থক্য আছে। বৈশেষিকগণ বলেছেন, পরমাণুর গুণ স্বীকার না করলে তাদের দ্বারা গঠিত যৌগিক বস্তুর গুণকে ব্যাখ্যা করা যায় না। বৈশেষিকগণের মতে, ক্ষিতি জাতীয় পরমাণুর গন্ধ, অপের স্বাদ, তেজের রূপ এবং বায়ুর স্পর্শ গুণ বর্তমান। বস্তু তার গঠনকারী পরমাণুর গুণ লাভ করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ন্যায় ও দর্শনের মতো বৈশেষিক দর্শনও বস্তুবাদী দর্শন। বৈশেষিকদের পরমাণুবাদ জগতের সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে সাধারণ মতবাদের তুলনায় উন্নততর মতবাদ। বৈশেষিক দর্শন পরমাণুবাদের সাথে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক নীতির সমন্বয়সাধন করেছে। ঈশ্বর জগতের সৃষ্টিকর্তা এবং নৈতিক নিয়ন্ত্রণ কর্তা।