Download Our App

বেদ অনুসারে মায়াবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, বেদ অনুসারে মায়ার স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মায়াবাদ কী?
অথবা, বৈদিক মায়াবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভারতীয় দর্শনে মায়া শব্দটির একক কোন অর্থ নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। মায়া শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বেদে, উপনিষদে, ভগবদগীতা, ব্রহ্মসূত্রে, গৌড়বাদের দর্শনে, শঙ্করের দর্শনে মায়া কথাটির ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে মায়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
বেদে মায়া : বেদ অনুসারে মায়ার কোন নির্ধারিত অর্থ নেই। এটি একই অর্থে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত না হয়ে বরং বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে। ঋগবেদে ৭৫টি শ্লোকে মায়ার ১০০টি অর্থ রয়েছে।
প্রজ্ঞা হিসেবে মায়া : বেদের অভিধানে ১১টি প্রজ্ঞার নাম রয়েছে, যার একটি হচ্ছে মায়া। বেদে মায়াকে অনেক সময় মূর্তশক্তি, অনেক সময় বিমূর্ত (মানসিক) শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার অনেক সময় উভয়কেই স্বীকার করা হয়েছে।
কপট হিসেবে মায়া : বেদে মায়াকে প্রজ্ঞার সাথে সাথে সমান্তরালভাবে কপট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মায়াকে কপট বিশ্বাসও বলা হয়।
রহস্যময়ী ও ঐদ্রোজালিক হিসেবে মায়া : অর্থববেদে মায়াকে রহস্যময়ী ও ঐন্দ্রোজালিক উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঋগবেদ অনুসারে ইন্দ্র বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। এটি কোন দৈহিক শক্তির কারণে নয়। বরং ইচ্ছা শক্তির কারণে । সে ইচ্ছা করলেই বিভিন্নরূপ ধারণ করতে পারে। সেজন্য ইন্দ্রকে মায়া বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
শক্তি হিসেবে মায়া : বেদে মায়াকে মূর্ত ও বিমূর্ত উভয় শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। চৈতরয়েও উপনিষদে মায়াকে স্বর্গীয় শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ শক্তি দৈহিক নয় বরং আধ্যাত্মিক।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জ্ঞান হিসেবে মায়া : ঋগবেদের সায়াহ্ন মায়াকে কর্ম বিসর্জন হিসেবে উল্লেখ করেন। এখানে মায়াকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জ্ঞান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে জানতে পারি। বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে মায়ার স্বরূপকে দেখতে পাওয়া যায়।
বিস্ময়কর শিল্প হিসেবে মায়া : ঋগবেদের বিভিন্ন জায়গায় মায়াকে বিস্ময়কর শিল্প হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঋগবেদের ১৬০.৪ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, দেবতাদের মধ্যে সেই বেশি শক্তিশালী বা দক্ষ যে দুটি অর্ধ বিশ্ব সৃষ্টি করতে পারে এবং সঠিক জ্ঞানের দ্বারা দুটি জগৎকেই অক্ষত বা ধ্বংসহীনভাবে পরিমাপ বা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটির একক কোন অর্থ নেই। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এ মায়া কথাটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।