উৎস : প্রশ্নের অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : পীর সাহেব এমদাদকে গরিব বলে সম্বোধন করলে সুফি সাহেব তার ভুল শোধরাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু পীর সাহেব ধনী-গরিব বলতে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্যটি করেন।
বিশ্লেষণ : কোলকাতায় দর্শনশাস্ত্রে অনার্স পড়া এমদাদ খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুরোদস্তুর একজন আস্তিক হয়ে গেল। সে বাড়াবাড়ি রকমের নামায পড়তে শুরু করল। বিশেষ করে সে নফল নামায বেশি বেশি করে পড়তে লাগল। নিজ হাতে তসবিহ তৈরি করে তা গুণে গুণে হাতের আঙ্গুল ক্ষয়ে ফেলল। এত কিছুর পরেও সে এবাদতে তেমন নিষ্ঠা আনতে পারছিল না। তখন সে সাদুল্লা নামে এক ব্যক্তির সন্ধান পায়। যার সুফি নামে খ্যাতি ছিল। সে স্থানীয় পীর সাহেবের খলিফা ছিল। এমদাদ তারে তার প্রাণের বেদনা জানালে সে এমদাদকে পরামর্শ দেয় একজন কামেল পীরের মুরিদ হতে। এমদাদ সম্মত হলে সুফি সাহেব তাকে তার নিজের পীরের কাছে নিয়ে যায়। নানা বুজরুকির এক পর্যায়ে সে এমদাদকে বলে ‘আহা বড় গরিব’। সুফি সাহেব পীর সাহেবের ভুল হচ্ছে দেখে আমতা আমতা করে বলে হুযুর এর অবস্থা তত গরিব নয়। ততোধিক কৌশলী পীর সাহেব নিজের ভুল হচ্ছে দেখে সাথে সাথে তার কথা অন্যভাবে প্রশ্ন করেন। মুখে ধোওয়া নিয়েই তিনি বলেন, ‘বেটা তোরা আজিও দুনিয়ার ধন-দওলৎ দিয়ে ধনী গরিব বিচার করিস।” পীর সাহেবের ধনী-গরিবের এ প্রশ্নের একদিকে যেমন তিনি আত্মরক্ষায় সমর্থ হন, অন্যদিকে মুরিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হন।
মন্তব্য : পীর সাহেবের এ চাতুর্যপূর্ণ প্রশ্ন মুরিদদের মাঝে প্রশংসিত হলেও সমাজের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর। আমাদের সমাজে কথার এ চাতুর্যপূর্ণ ব্যবহার বহু ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।