অথবা, নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান কী?
অথবা, নারী শিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়ার ভূমিকা কী?
উত্তর।। ভূমিকা : বাঙালি দর্শনের ইতিহাসে যে কয়েকজন প্রগতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থার সমর্থক দেখা যায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনিশ শতকের রক্ষণশীল সমাজে তিনি অবরোধ প্রথা ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং নারী শিক্ষার আন্দোলন করেন। বাঙালি সমাজে নারী শিক্ষা প্রবর্তনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষা আন্দোলন : বাঙালি সমাজে মুসলিম নারী শিক্ষা প্রবর্তনে বেগম রোকেয়া একটি অতিপরিচিত নাম। পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে স্বামীর সহায়তায় তিনি ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার অর্থ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাগলপুরে “সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন (১৯০৯)। পরবর্তীতে ১৯১৪ সালের শেষের দিকে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং আটজন ছাত্রী নিয়ে ১৯১১ সালে সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল উর্দু প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ছাত্রী সংখ্যা গিয়ে দাড়ালো ছিয়াশি জন। তিনি নানা বিদ্রূপ আর প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে লাগলেন। পরবর্তীতে স্কুলটি মধ্য ইংরেজি স্কুলে উন্নীত হয়। ১৯৩১ সালে এটি উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে পরিণত হয়। কোন রোকেয়ার স্বপ্ন ও আদর্শ ছিল মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য কিছু একটা করা। আর তাই নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি স্কুলটিকে আদর্শ স্কুলে পরিণত করেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ছাত্রী সংগ্রহ করেছেন, নারী শিক্ষার জন্য লেখনী ধারণ করেছেন। তিনি পর্দার অন্তরালে থেকে নারীরা কিভাবে শিক্ষিত হতে পারে সেজন্য কাজ করেছেন। অবশেষে পর্দা প্রথার কঠোরতার প্রতি সমালোচনা করে মুসলিম মেয়েদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির দিশা দেখিয়েছেন। তিনি শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন শিক্ষার লক্ষ্য পরীক্ষায় পাশ করা নয় বরং জ্ঞান লাভ করা। তিনি বলেন,মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ জননী, আদর্শ নারী রূপে পরিচিত হতে পারে। স্ত্রী শিক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা যা চাহিতেছি তাহা ভিক্ষা নয়, অনুগ্রহের দান নয়-আমাদের জন্মগত অধিকার। ইসলাম নারীকে সাতশ বছর আগে যে অধিকার দিয়েছে তার চেয়ে আমাদের দাবি একবিন্দু বেশি নয়।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষা প্রবর্তনে অসামান্য ত্যাগ ও পরিশ্রম করেছেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তাদের অত্যাচার নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। আর তাই তিনি নারী শিক্ষা আন্দোলনকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বর্তমান নারী সমাজের চিত্র বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষা আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।