উত্তর:
ভূমিকা:বুদ্ধিঅভীক্ষা একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা একজন ব্যক্তির মনোবুদ্ধি, মনোস্থিরতা, এবং বুদ্ধিমত্তা স্তর নিরীক্ষণ করে। এটি একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন ব্যক্তির মানসিক প্রস্থান এবং মনঃস্থিরতা স্তর নিরীক্ষণ করে এবং এই স্তরের উন্নতির উপর কাজ করে।
ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা এবং কৃতি অভীক্ষা দুটি বিভিন্ন ধরণের অভীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের পার্থক্য নিরূপণ করে।
ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা: এই অভীক্ষা ভাষার ব্যবহারের সাথে জড়িত। এটি কোন ব্যক্তির ভাষার ব্যবহার, শব্দের সঠিক ব্যবস্থা, বাক্য গঠন এবং সঠিক ব্যাকরণের প্রতি কৌশল নিরীক্ষণ করে। এটি শিক্ষার্থীদের প্রশাসন, ভাষা শেখানো এবং ভাষার উন্নতির সাথে সম্পর্কিত।
কৃতি অভীক্ষা: এই অভীক্ষা লেখার স্কিল এবং উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনা, ইমেল, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি বিভিন্ন লেখা কাজের সাথে সম্পর্কিত। এটি লেখা মৌলিকতা, শব্দের ব্যবহার, লেখা প্রস্তুতি, এবং সাজানোর কৌশল নিরীক্ষণ করে।
তাহলে, মূল পার্থক্য হলো ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা মাত্র ভাষার ব্যবহার এবং ব্যাকরণের প্রতি নিরীক্ষণ করে, যখন কৃতি অভীক্ষা লেখা স্কিল, লেখার প্রস্তুতি, আরও ব্যাপক লেখা কাজের প্রক্রিয়াকে নিরীক্ষণ করে।
ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য : নিম্নে ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি বুদ্ধি
অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থী লিখিত বা মৌখিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, কৃতি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থী হাত ও পায়ের সাহায্যে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
২.ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত নয়, কিন্তু কৃতি অভীক্ষা সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত ।
৩. কৃতি অভীক্ষার ক্ষেত্র ব্যাপক। তা শিশু নিরক্ষর, মূক, বধির, লেখাপড়া জানা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । অপরপক্ষে, ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষা কেবল যারা লেখাপড়া জানে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
- ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থীর সফলাঙ্ক বুদ্ধাঙ্কের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কৃতি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থীর বুদ্ধি পরিমাপের জন্য আদর্শমান (norm) ব্যবহার করা হয়।
৫. ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা সব শিশুর উপর প্রয়োগ করা যায় না। অন্যদিকে, কৃতি অভীক্ষা সব ধরনের শিশুর বুদ্ধি নির্ণয়ে প্রয়োগ করা যায়।
৬. ভাষাগত অভীক্ষা ব্যক্তিভিত্তিক অভীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়, পক্ষান্তরে কর্মসম্পাদনী অভীক্ষা ব্যক্তিভিত্তিক ও দলগত উভয়ভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. কর্মসম্পাদনী বুদ্ধি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থীর সাফল্যাঙ্ক সময়ের ভিত্তিতে নিরূপণ করা হয় অর্থাৎ, সমস্যা সমাধানে সময়। কম লাগলের সাফল্যাঙ্ক বেশি হয়। কিন্তু ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষায় এরূপ কোন ব্যবস্থা নেই।
৮. একই সাথে বহুলোকের উপর ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে, কৃতি অভীক্ষায় একই সাথে বহুলোকের অভীক্ষা নেওয়া যায়।
৯. আবেগজনিত দুর্বলতা ভাষাগত অভীক্ষায় প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু কৃতি অভীক্ষায় কোন প্রভাব ফেলে না।
১০. নামকরণ থেকেই বুঝা যায় যে, ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা ভাষার উপর নির্ভরশীল এবং কৃতি অভীক্ষায় কাজের মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাপ করা হয়।
১১. ভাষাগত বুদ্ধি অভীক্ষায় অভীক্ষার্থীকে বিশেষ কোন নির্দেশ না দিলেও অসুবিধা হয় না, কিন্তু কর্মসম্পাদনী অভীক্ষায় অভীক্ষার্থীকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিতে হয়।
১২. ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষায় অভীক্ষকের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ মনোভাব অভীক্ষার ফলাফল বিস্তার করতে পারে। অপরদিকে, কৃতি অভীক্ষায় অভীক্ষকের পক্ষপাতিত্ব অভীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করে না।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়। যে, ভাষাভিত্তিক এবং কৃতি উভয় অভীক্ষাই আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষার পাশাপাশি কৃতি অভীক্ষা বর্তমানে সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।