অথবা, বিস্তার পরিমাপ কাকে বলে? অনপেক্ষ বিস্তার পরিমাপের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিসংখ্যানের গাণিতিক তথ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিস্তার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । অভ্যন্তরীণ সংখ্যার মানের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। কোন তথ্য বিন্যাসের কেন্দ্রীয় মান গড়, মধ্যক ও প্রচুরকের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় । কিন্তু এ দ্বারা কেন্দ্রীয় মান হতে তথ্যসারির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সংখ্যার দূরত্ব বা ব্যবধান নির্ণয় করা যায় না । তথ্যসারির কেন্দ্রীয় প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি সংখ্যামান কেন্দ্রীয় মানের কতটা কাছাকাছি বা দূরে অবস্থিত সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন, যার জন্য বিস্তার পরিমাপ সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক ।
বিস্তার পরিমাপ : যে সংখ্যাগত পরিমাপ দ্বারা কোন তথ্যসারি বা নিবেশনের মানগুলো তাদের কেন্দ্রীয় মানের চতুর্দিকে কিভাবে বিস্তৃতি তার পরিমাপ করা হয় তাকে বিস্তার পরিমাপ বলে। এটি একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি । যার মাধ্যমে কোন নিবেশনের কেন্দ্রীয় মান হতে অন্যান্য মানগুলোর পার্থক্য বা ভেদের গড় মান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ গড় বিস্তৃতি বা দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। এ গড় মান যত ছোট হবে তথ্যের মানগুলোর বিস্তৃতির পরিমাণ ততই কম হয় । অর্থাৎ মানগুলোর মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য বা ভেদ কম হলে বিস্তৃতির পরিমাণও কম হয়। আবার, এ গড় মান যত বড় হবে ততই তথ্যের মানগুলোর বিস্তৃতি বেশি হবে। অর্থাৎ তথ্যসমূহের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যের পরিমাণ বেশি । সুতরাং এ গড় মানের ভিত্তিতে দু বা ততোধিক নিবেশনের মধ্যে তুলনা করা যায়। কারণ, যে নিবেশনটির গড় বিস্তৃতি কম সে নিবেশনটির মানসমূহের অভ্যন্তরীণ ভেদও কম অর্থাৎ তথ্য সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। আবার, গড় বিস্তৃতি বড় হলে তথ্য অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ হয়ে থাকে । পরিসংখ্যানিক উপাত্তের বা তথ্যের পারস্পরিক দূরত্ব ও দূরত্বের মাত্রাকেই বলা হয় বিস্তার । বাউলি (A. L. Bowley) বিস্তারের সংজ্ঞা দেন এভাবে “Dispersion is a measures of variations of the items.” বিস্তারের সংজ্ঞায় হেইন্স কোহলার (Heinz Kohler) বলেন, “Measures of dispersion (or Variability) numbers that indicate the spread or scatter of observations; that show the extent to which individual values in a data set differ from one another and hence, differ from their central location.”
মুরে আর স্পাইজেল (Murray R. Spiegel) তাঁর Statistics গ্রন্থে বলেন, “The degree to which numerical data tend to spread about an average is called the variation or dispersion.” সুতরাং বলা যায়, কোন নিবেশনের মধ্যকমান থেকে অন্যান্য সংখ্যাগুলোর দূরত্ব পরিমাপ করতে এবং দুই বা ততোধিক নিবেশনকে তুলনা করতে যে, পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাকে বিস্তার পরিমাপ বলে।
পরম বা অনপেক্ষ বিস্তার পরিমাপ : যে পরিমাপসমূহ কোন নিবেশনের মধ্যকমান থেকে নিবেশনের অন্তর্ভুক্ত সংখ্যাগুলোর বিস্তৃতি পরিমাপ করে তাদেরকে পরম বা অনপেক্ষ বিস্তার পরিমাপ বলে । এটা আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত ।
যথা : ক. পরিসর, খ. গড় ব্যবধান বা গড় বিচ্যুতি, গ. চতুর্থক ব্যবধান, ঘ. পরিমিত ব্যবধান বা আদর্শ বিচ্যুতি ও ঙ. ভেদাংক ।
ক. পরিসর : কোন নিবেশনের সংখ্যাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধানই হচ্ছে তাদের পরিসর। তবে তথ্যসারির সর্বোচ্চ মান হতে সর্বনিম্ন মান বিয়োগ করলে পরিসর পাওয়া যায়। যথা :
কাঙাল খ. গড় ব্যবধান : তথ্যের কেন্দ্রীয় মান হতে অন্যান্য মানসমূহের ব্যবধান বা বিস্তৃতির গড় হলো গড় ব্যবধান । অবিন্যস্ত তথ্য থেকে যদি X, X2Xn কোন তথ্যসারির n সংখ্যক মান হয় এবং যাদের গড় বা যোজিত গড় x হয়, তবে গড় হতে নির্ণীত গড় ব্যবধানের সূত্রটি নিম্নরূপ হবে- গড় হতে নির্ণীত গড় ব্যবধান বা গড় ব্যবধান, MD (X) বা, MD = | x − 1 |
গ. পরিমিত ব্যবধান : কোন তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের গাণিতিক গড় হতে প্রতিটি তথ্যমানের ব্যবধান বা বিচ্যুতির বর্গ সমষ্টিকে মোট তথ্যসংখ্যা (মোট গণসংখ্যা) দ্বারা ভাগ করলে যে মান নির্ণীত হয়, তার ধনাত্মক বর্গমূলকে পরিমিত ব্যবধান বলা হয়। একে গ্রিক অক্ষর o (Sigma) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। কোন তথ্যসারির n সংখ্যক মান 1, X2, …, xp এবং এদের গাণিতিক গড় হলে পরিমিত ব্যবধান হবে- এখানে, x = চলক বা তথ্যমান x = গড় বা পাণিতিক গড় n = মোট তথ্যসংখ্যা
ঘ. চতুর্থক ব্যবধান : কোন তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের মধ্যমা বা দ্বিতীয় চতুর্থক হতে প্রথম চতুর্থক এবং তৃতীয় চতুর্থক হবে মধ্যমার বা দ্বিতীয় চতুর্থকের ব্যবধানের গাণিতিক গড়কে চতুর্থক ব্যবধান বলে। কোন তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চতুর্থক যথাক্রমে Q, Q ওQ, হয় তবে চতুর্থক ব্যবধান হবে নিম্নরূপ : পরিমিত ব্যবধান, 5 = | E (x – x ) 2 n চতুর্থক ব্যবধান 03-9 [1] 2
ঙ. ভেদাংক : কোন তথ্যসারি বা কোন গণসংখ্যা নিবেশনের গাণিতিক গড় হতে তথ্যমানসমূহের ব্যবধান বা বিচ্যুতির বর্গের সমষ্টিকে মোট তথ্যসংখ্যা বা গণসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকে ভেদাংক বলে। ভেদাংককে গ্রিক অক্ষর 0 2 (Sigma Square) দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কোন চলক x বা তথ্যসারি এর n সংখ্যক মান যথাক্রমে x1, X2, Xn হয় এবং এদের গাণিতিক গড় x হলে ভেদাংক ৫ কে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করা হয় : ভেদাংক, O 2 = [ (x – x) 2 n
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যরাশির কেন্দ্র থেকে অন্যসব রাশিগুলো দূরত্বে বা ব্যবধানে অবস্থান করছে তাকে সঠিকভাবে জানার জন্য উপযুক্ত পরিমাপ পদ্ধতিগুলো খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রশ্নাতা বিস্তারের আদর্শ পরিমাপ কোনটি এবং কেন? বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কী?