অথবা, বিস্তার পরিমাপের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, অনপেক্ষ ও আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর ।
অথবা, বিস্তার পরিমাপের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?
অথবা, অনপেক্ষ ও আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপের পার্থক্য লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিসংখ্যানের গাণিতিক তথ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিস্তার পরিমাপ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। অভ্যন্তরীণ সংখ্যার মানের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। কোন তথ্য বিন্যাসের কেন্দ্রীয় মান গড়, মধ্যক ও প্রচুরকের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। কিন্তু এ দ্বারা কেন্দ্রীয় মান হতে তথ্যসারির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সংখ্যার দূরত্ব বা ব্যবধান নির্ণয় করা যায় না । তথ্যসারির কেন্দ্রীয় প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি সংখ্যামান কেন্দ্রীয় মানের কতটা কাছাকাছি বা দূরে অবস্থিত সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন, যার জন্য বিস্তার পরিমাপ সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক ।
বিস্তার পরিমাপের বৈশিষ্ট্য : কেন্দ্রীয় প্রবণতা বিভিন্ন মানের ভিত্তিতে বিস্তার পরিমাপ করা হয় । একারণে বলা হয়, কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের যথোপযুক্তার উপর নির্ভর করে বিস্তার পরিমাপের যথোপযুক্ততা। একটি আদর্শ অর্থাৎ সর্বোত্কৃষ্ট বিস্তার পরিমাপের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা আবশ্যক :
i. একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপের সুসংজ্ঞায়িত ও সহজবোধ্য সংজ্ঞা থাকা উচিত যেন বিস্তার পরিমাপে কোন ধরনের জটিলতা বৃদ্ধি না পায়।
ii. এটি সহজবোধ্য হওয়ার পাশাপাশি সরল গণনার উপযোগী হওয়া উচিত যেন কম সময় ও শ্রমে সকলের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
iii. এটি নির্ণয়ে প্রক্রিয়া সকল মানের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কারণ সকল মানের ভিত্তিতে নির্ণীয় বিস্তার পরিমাপকটি নির্ভরযোগ্য ও প্রতিনিধিত্বমূলক হয়।
iv. বিস্তার একটি আদর্শ ও যথোপযুক্ত গড় হতে নির্ণীত হতে হবে।
v. এটি পরবর্তী যে কোন গাণিতিক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে।
vi. ইহা তথ্যসারির প্রান্তীয় মান অর্থাৎ তথ্যসারির সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মান দ্বারা বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হবে না।
vii. এটি নমুনা বিচ্যুতি বা নমুনার তারতম্যের ফলে স্বল্প মাত্রায় প্রভাবিত হবে।
সুতরাং উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ যে বিস্তার পরিমাপ মেনে চলবে তাকে আদর্শ বিস্তার পরিমাপ বলা হবে। অনপেক্ষ ও আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য : বিস্তার পরিমাপ এমন একটি বিষয় বা গাণিতিক প্রক্রিয়া যেটা কোন নিবেশনের গড় থেকে অন্যান্য রাশির দূরত্বকে পরিমাপ করে। নিবেশনের বিস্তার পরিমাপ করার জন্য মূলত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। পদ্ধতি দুটির মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা থাকলেও কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে তাদের মধ্যে পার্থক্য বা অমিল পরিলক্ষিত হয় ।
অনপেক্ষ পরিমাপ : যে পরিমাপসমূহ কোন নিবেশনের মধ্যকমান থেকে নিবেশনের অন্তর্ভুক্ত সংখ্যাগুলোর প্রকৃতি পরিমাপ করে তাদেরকে পরম বা অনপেক্ষ পরিমাপ বলে।
আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপ : দুই বা ততোধিক নিবেশনের ভিন্ন ভিন্ন একক থাকে বলে শুধু পরম পরিমাপগুলোর ভিত্তিতেই নিবেশনগুলোকে তুলনা করা যায় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য কতকগুলো এককমুক্ত সংখ্যা বা বিস্তার ব্যবহার করা হয়। অনপেক্ষ ও আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে এদের মধ্যে সুস্পষ্ট রয়েছে। নিম্নে এদের মধ্যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য উল্লেখ করা হলো :
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিমিত ব্যবধান পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । পদ্ধতি দুটির একটির মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট নিবেশনের বিস্তৃতি পরিমাপ করতে এবং অপরটির মাধ্যমে দুই বা ততোধিক রাশির বিস্তৃতি তুলনা করার জন্য বিস্তার পরিমাপ ব্যবহৃত হলেও বিস্তার পরিমাপের মূল লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয় রাশি থেকে অন্যান্য রাশির দূরত্ব বা স্থিতিকে পরিমাপ করা।