উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এর লক্ষ্য অর্জনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সুস্বাস্থ্যের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য। বিশ্বব্যাপী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য (WHO) এর প্রচেষ্টা অব্যাহত। (WHO) এর প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান, পরিষ্কার পানীয় জল ও
পয়ঃনিষ্কাশনের অধিকতর মানুষের প্রবেশাধিকার লাভের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কমেছে। অধিকাংশ অঞ্চলে গড় আয়ু বেড়েছে, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী সফলতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
→ WHO এর প্রতিষ্ঠা : জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৪৫ সালের সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে ব্রাজিল জাতিসংঘের লক্ষ্যের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রস্তাব দেয়। ১৯৪৬ সালের জুন-জুলাই মাসে নিউইয়র্কে ৬ দেশের প্রতিনিধিদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ২২ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গঠনতন্ত্র স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল
আনুষ্ঠানিকভাবে এটি কার্যকর হয়। এজন্য ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সংগঠন জাতিসংঘের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৪ । বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে (WHO) এর কার্যক্রম শুরু হয়।
→ WHO এর সফলতা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাপক সফলতার সাথে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। নিম্নে বিশ্ব সংস্থার সফলতা আলোচনা করা হলো ঃ
১. সংক্রামক ব্যাধি নির্মূল ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রামক ব্যধি নির্মূলে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে WHO অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে বিশ্ব অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ম্যালেরিয়া, কলেরা ও যক্ষ্মার প্রভাব হ্রাস করা, বিশ্বে সংক্রামক রোগের সমস্যা সমাধানে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস করা এবং উন্নয়নশলী দেশে ব্যবহারের জন্য নতুন জ্ঞান, হস্তক্ষেপের পদ্ধতি, বাস্তবায়ন কৌশল ও গবেষণা সামর্থ্য তৈরি করা। যার ফলে WHO সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলে বিরাট সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২. পোলিও নির্মূল ৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলে ১৯৮৮ সালে উদ্যোগ নেয়, তখন সারা বিশ্বে পোলিও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা UNICEF, যুক্তরাষ্ট্র রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ এবং রোটারী আন্তর্জাতিক এর সহযোগিতার পাঁচ বছরে প্রায় ২০ হাজার লক্ষ্য শিশুকে শিশুর সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ও বেশি শিশুকে ১৯৯৮ সালে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হয় এবং বিশ্বজুড়ে ১৪০টি পোলিও গবেষণাগারের একটি
নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয় WHO এর সহযোগী অন্যান্য সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমান বিশ্ব পোলিও মুক্তির দ্বারপ্রান্তে
অবস্থান করছে।
৩. এইডস নির্মূল ঃ AIDS বর্তমান বিশ্বে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইডস রোগটি প্রথমে ধরা পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯০ লক্ষ লোক ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে এবং ৩৫০ লাখের বেশি মানুষ এখন এই রোগ নিয়ে বসবাস করছে। বিশ্বের কতিপয় দেশ AIDS এর বিস্ফোরণের মুখী রয়েছে। প্রতিবছর ৫০
লক্ষেরও বেশি নতুন সংক্রামকের মাত্রায় এই মহামারী এখনও বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় AIDS -এর সম্প্রসারণ থামানোর লক্ষ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও NGO -এর সাথে একযোগে কাজ করছে। ফলে এইডস সম্পর্কে মানুষ সচেতন হচ্ছে এবং এ রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে।
৪. গুটিবসন্ত নির্মূল ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বসন্ত নির্মূলে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গুটি বসন্ত যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে তখন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮০ সালে বিশ্বব্যাপী এ রোগ নির্মূলের ঘোষণা দেয়। ১০ বছর অভিযানের পর এটি অর্জিত হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী গুটিবসন্তের
হাত থেকে লক্ষ লক্ষ লোক মুক্তি পায়। যা WHO এর অন্যতম সফলতা।
৫. টিকা আবিষ্কার ঃ রোগ প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হলো টিকা। WHO এর প্রচেষ্টায় এমন অনেক জটিল রোগের টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হায়েছে যা প্রদান করলে ঐ রোগ আর কখনোই হবে না। ইতোমধ্যে অনেক জটিল রোগের টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। ফলে ঐসব রোগের টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে যা WHO-এর অন্যতম সফলতা।
৬. ওষুধ আবিষ্কার ও গবেষণা ৪ রোগ নিরাময়ের প্রধান হাতিয়ার ওষুধ। প্রয়োজনীয় ওষুধ আবিষ্কারের জন্য দরকার কার্যকর গবেষণা। আর গবেষণার জন্য প্রয়োজন অর্থ ও প্রযুক্তির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশকে গবেষণা ও ওষুধ আবিষ্কারের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করেছে। ফলে বর্তমানে অনেক জটিল রোগের ওষুধ আবিষ্কার করতে
সফল হয়েছে।
৭. ঘাতক ছয়টি রোগের টিকা প্রদান ঃ বিশ্বে এক সময় ৬টি জটিল রোগের আধিপত্য ছিল। এ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু ও লোক মারা যেত। এ রোগগুলোর হাত থেকে বাঁচতে টিকা আবিষ্কার ও বিনামূল্যে তা
সরবরাহের ব্যবস্থা করে। শিশুদের এ টিকা প্রদান করা হলে ৬টি ঘাতক রোগ কখনোই আক্রান্ত হবে না। ফলে এ রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম সফলতা।
৮. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান : বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এমনকি উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
৯. যৌথ কার্যক্রম ঃ ১৯৮০ সালে থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে WHO, UNICEF এর সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় পোলিও, ধনুস্টংকার, হাম, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া ও যক্ষ্মা এই ৬টি ঘাতক রোগের টিকা হার ৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নতি করে। ফলে অকাল মৃত্যু থেকে বেঁচে যায় ২৫ লক্ষ শিশুর জীবন। WHO স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়, মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন যুবকদের, সুসংগঠিতকরণ, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে UNICEF, ILO, INESCO প্রভৃতি সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ কার্যক্রম নেয়।
উপসংহার. পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও কর্মসূচি সম্প্রসারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সফলতা শতভাগ । সুস্বাস্থ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উন্নয়ন, গবেষণা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও পরিবেশ উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণের বিকাশ, যৌথ কার্যক্রম প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ সংস্থার সাফল্যের নজির আকর্ষণীয়।