বিশ্বের জীবনের আদি নেই, অন্ত নেই, শুধু মধ্য আছে, কিন্তু তারই অংশীভূত আমাদের জীবনের আদি আছে, অন্ত ছে, শুধু মধ্য নেই।”-ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে প্রাবন্ধিক আমাদের জীবনের একটি অসঙ্গতিকে কাব্যিক ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন।
বিশ্লেষণ : আমরা মনের অজ্ঞাতে জীবনের তাৎপর্যময় মধ্যভাগকে গুরুত্বহীন করে তুলছি। আমরা জীবনের প্রথম ও শেষ নিয়ে মাতামাতি করি। জন্ম এবং মৃত্যুকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু মধ্যবর্তী যে বিস্তৃত সময়টা যৌবনের গণ্ডিতে বিরাজমান তাকে যথার্থ ব্যবহার করি না। আজকের দিনে এদেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে একদিকে বালক, অপরদিকে বৃদ্ধ। সাহিত্য ক্ষেত্রে একদিকে স্কুল বয়, অপরদিকে স্কুল মাস্টার। সমাজে একদিকে বাল্যবিবাহ, অপরদিকে অকালমৃত্যু। ধর্মক্ষেত্রে একদিকে ইতি ইতি, অপরদিকে কেবল নেতি নেতি; অর্থাৎ একদিকে লোষ্ট্ৰকাষ্ঠ ও দেবতা, অপরদিকে ঈশ্বরও ব্রহ্ম নন। আমাদের জীবনগ্রন্থে প্রথমে ভূমিকা আছে, শেষে উপসংহার আছে; ভিতরে কিছু নেই। এ বিশ্বের জীবনের আদি নেই অন্ত নেই, শুধু মধ্য আছে। কিন্তু তারই অংশীভূত আমাদের জীবনের আদি আছে অন্ত আছে কিন্তু মধ্য নেই অর্থাৎ বর্তমান। আমাদের সমাজের মানুষ কৈশোর ও শৈশবকে সমাদর করে কিন্তু যৌবনকে ভয় পায়। যৌবন হয়ে থাকে গুরুত্বহীন। আবার বার্ধক্য ও মৃত্যুকে সমীহ করে। এ কারণেই আমাদের সামাজিক উন্নতি ব্যাহত হয়।
মন্তব্য : যৌবন জীবনের মধ্যবর্তী উৎকৃষ্ট সময় একে বাদ দিয়ে শৈশব ও বার্ধক্যকে নিয়ে মাতামাতি করলে সমাজ গতি হারাতে বাধ্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%af%e0%a7%8c%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%aa/