বিনেসিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষা ও ওয়েসলারের বুদ্ধি অভীক্ষা কী?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

বিনেসিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষা ও ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা বলতে কী বুঝ ?

অথবা, বিনেসিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষা ও ওয়েসলারের বুদ্ধি অভীক্ষা কী?

উত্তরা ভূমিকা : কর্মচারী নির্বাচনের নানা রকম অভীক্ষার মধ্যে মনোবৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক এবং ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাসমূহের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশ শতকের প্রথম দিকে হুগো মুনস্টারবার্গ সর্বপ্রথম কর্মচারী নির্বাচনের জন্য মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার প্রচলন করেন। এরপর থেকে শিল্পকারখানায় পর্যায়ক্রমে মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার প্রয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার গুরুত্ব মনোবিজ্ঞানে অনস্বীকার্য।

বিনেসিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষা : ফরাসি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনে এবং তাঁর সহযোগী থিওডোর সিমোঁ ১৯০৫ সালে প্রথম বুদ্ধি অভীক্ষা উদ্ভাবন করেন। এ অভীক্ষাটি বিনেসিমোঁ স্কেল নামে পরিচিত। তাঁর যুক্তি, পার্থক্য নির্ণয়, বোধগম্য ও বিচারক্ষমতা এবং অন্যান্য বিষয়ে কতকগুলো প্রশ্ন তৈরি করে তা স্কুলে যেসব ছাত্র সাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছিল তাদের উপর প্রয়োগ করেন। যেসব ছাত্র যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছিল, তারা সে ধরনের ৩০টি প্রশ্ন নির্বাচন করে সহজ হতে কঠিন এভাবে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে একটি স্কেল তৈরি করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা এ স্কেলের কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে তার ভিত্তিতে তাদের মানসিক বিকাশ পরিমাপ বা নির্ধারণ করা। এ অভীক্ষায় কিছু ত্রুটি ছিল। যেমন- এর বিষয়গুলো বয়সের অনুপাতে সাজানো ছিল না। এছাড়া কিছু বিষয় ছিল যার জন্য ছাত্রদের বিশেষ শিক্ষাদানের দরকার হতো। ১৯৮০ সালে বিনেসিমো অভীক্ষার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ সংস্করণে বিষয়গুলো বয়স অনুপাতে সাজানো হয়। এখানে সকল বিষয়কে (প্রশ্নকে) ৩ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত স্তরে ভাগ করা হয়। প্রত্যক বয়সের জন্য বা উপঅভীক্ষার জন্য ৪ থেকে ৮টি প্রশ্ন রাখা হয়। এ অভীক্ষায় শিশুদের কোন বিশেষ শিক্ষাদানের প্রয়োজন হয় না। কারণ এ অভীক্ষায় এমন ধরনের প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ঐ বয়সের শতকরা ৬০-৭৫ ভাগ শিশু সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। বিনেসিমোঁ অভীক্ষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এ অভীক্ষাতে প্রথম মানসিক বয়সের (Mental age) ধারণা ব্যবহার করা হয়।

ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা : বুদ্ধি পরিমাপের নানা প্রকার অভীক্ষার মধ্যে ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা অন্যতম। বয়স্কদের বুদ্ধি পরিমাপের ক্ষেত্রে এ অভীক্ষা খুবই উপযোগী। ১৯৩৯ সালে নিউইয়র্কের বেলেভিউ হাসপাতালের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ডেভিড ওয়েসলার বয়স্কদের বুদ্ধি পরিমাপের জন্য ওয়েসলার বেলেভিড বুদ্ধি অভীক্ষা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে এ অভীক্ষাটির একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এটি ওয়েসলার বুদ্ধি অভীক্ষা (Wechsler Adult Intelligence Seale) বা সংক্ষেপে WAIS নামে পরিচিত।এছাড়াও ওয়েসলার শিশুদের বুদ্ধি পরিমাপের জন্য দু’টি অভীক্ষা প্রণয়ন করেন। এর মধ্যে একটি হলো ওয়েসলার ইন্টেলিজেন্স স্কেল ফর চিলড্রেন (Wechsler Intelligence Scale for Children) সংক্ষেপে WISC এবং অন্যটি হলো ওয়েসলার প্রিস্কুল এন্ড প্রাইমারি স্কেল অব ইন্টেলিজেন্স (Wechsler Preschool and Primary Scale of Intelligence) সংক্ষেপে (WPPS) ওয়েসলারের বয়স্ক বুদ্ধি অভীক্ষাটি একটি বহুল ব্যবহৃত ব্যক্তিভিত্তিক অভীক্ষা। অভীক্ষাটিতে ১১টি উপ অভীক্ষা (Sub-test) রয়েছে। এই ১১টি |উপঅভীক্ষাকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : ভাষাগত এবং কর্মসম্পাদন বা কৃতি অভীক্ষা।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্পকারখানায় এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্ম নির্বাচনে মনস্ত তাত্ত্বিক অভীক্ষা একটি যুগোপযোগী এবং তথ্য সমৃদ্ধ মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষাগুলো যথার্থ এবং সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করে অতি সহজেই উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন করা সম্ভব। একারণেই শিল্পোন্নত দেশে ক্রমেই এর পরিসর এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।