বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আলোচনা কর। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের বৈশিষ্ট্যাবলি আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বুঝ। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের কী কী “বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

উত্তরঃ ভূমিকা : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভাগীয় স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকগণ যদি স্বাধীন বা মুক্ত না থাকতে পারেন তাহলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই কোন বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে বিচারকগণকে অবশ্যই সততা, বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করতে হবে। জনগণের স্বাধীনতা দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগের উপর নির্ভরশীল। যার জন্য বিচার বিভাগকে সর্বদা সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি হস্তে
মুক্ত থাকতে হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সহজভাবে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি, আইনানুযায়ী সরকারের বিচারকার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন। এজন্য বিচার বিভাগকে সর্বপ্রকার হস্তক্ষেপমুক্ত থাকতে হবে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :

প্রফেসর গার্নর শব্দ, “বিচারকদের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা থাকলে, বিচার বিভাগ যে উচ্চ উদ্দেশ্যগুলির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা সুরক্ষিত করা যায় না।”

লর্ড ব্রাইসের মতে, “কোন দেশের সরকারের কৃতিত্ব পরিমাপ করার সর্বোত্তম মাপকাঠি হচ্ছে তার বিচার বিভাগের দক্ষতা ও যোগ্যতা।”

জেন্স (Janes) বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ হলো বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও আপোশহীনতা।” হ্যামিলটন (Hamilton) এর অভিমত, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত হয়ে স্বাধীন
নিরপেক্ষভাবে বিচারের রায় ঘোষণা করা।”

কেন্ট (Kent) এর ভাষায়, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বিচার বিভাগের প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষতাকে বুঝায়।” সুতরাং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগকে বুঝায়। এর মাধ্যমে বিচার করা স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।

স্বাধীন বিচার বিভাগের বৈশিষ্ট্যাবলি : কোন দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন কি না তা নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি দৃষ্টে উপলব্ধি করা যায়। যেমন-

১.বিচার বিভাগ তাদের দায়িত্ব পালনে হবেন নিবেদিত প্রাণ।

২.কোনপ্রকার প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হবে না।

৩.বিচারকগণ আইনানুযায়ী সবকিছুর মাসালা করবেন।

৪. বিচারকগণ দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন।

৫.আদালতের রায় যথাযথভাবে কার্যকরী হতে হবে।

৬.স্বচ্ছ ও সর্বজনগ্রাহ্য বিচার পদ্ধতির প্রবর্তন।

৭.বিচার বিভাগের পর্যালোচনার নীতি অনুসরণ।

উপসংহার: আলোচনার শেষ প্রান্তে এনে আমরা বলতে পারি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সময় উপযোগী ও জনস্বার্থে নিয়োজিত করার জন্য দরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। যখন বিচারকগণ অন্য কোন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করে তখন তাকে বলা হয় স্বাধীন বিচার বিভাগ।