বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো কী কী?
অথবা, বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কী কী কৌশল রয়েছে?
অথবা, বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : চল একটি বৈজ্ঞানিক শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Variable এবং বাংলা অর্থ হল চলনশীল বা পরিবর্তনশীল। সাধারণ অর্থে চল বলতে এমন একটা বৈশিষ্ট্য বা গুণ বুঝায়, যা একই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। চল অর্থাৎ, চল মূল্যায়ন পরিবর্তনশীল। একটি পরীক্ষণে অনেকগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ হতে পারে। অতএব চল বলতে আমরা বুঝি যে কোন উপাদান, যা আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাহাই চল।
বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশল : নিম্নে বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো বর্ণনা করা হল-
১. বর্জন : বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কৌশল হল এটি বর্জন করা। শব্দশিক্ষণ, চিন্তন, আবেগ ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করার সময় বাইরের আওয়াজ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য বাইরের শব্দ যাতে গবেষণাগারে প্রবেশ করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়।
২. অবস্থার সমতা : সব পরীক্ষণের ক্ষেত্রে একই লিখিত নির্দেশ দিতে হবে, যাতে অবস্থার সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী চলগুলোকে অপসারণ করা যায় না। যেমন- পরীক্ষণের সময় হল একটি বাহ্যিক চল যাকে বাদ দেওয়া যায় না। এমতাবস্থায় সব পরীক্ষণ পাত্রের উপর এরূপ চলগুলোর প্রভাব যা সমান হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৩. সমভারীকরণ : বাহ্যিক চলকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি অন্যতম কৌশল হল সমভারীকরণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতেসব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সমান সমান দু’টি দল গঠন করা হয়। একটি দলকে পরীক্ষণ দল ও অন্য দলকে নিয়ন্ত্রিত দল বলা হয়ে থাকে। পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দল সব শর্তের দিক থেকে সমান থাকবে। একটি দিক থেকে কেবল পার্থক্য থাকবে তা হল পরীক্ষণ দলে একটি পরীক্ষামূলক চল প্রয়োগ করা হবে, যা নিয়ন্ত্রিত দলে প্রয়োগ হবে না।
৪. প্রতিসমভারীকরণ : যখন একই পরীক্ষণ পাত্রদের একাধিক পরীক্ষণমূলক অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়, তখন অনেক সময় পরীক্ষণ পাত্রদের প্রথম অধিবেশন এর অভিজ্ঞতা তাদের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রতিক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে। এক্ষেত্রে ফলাফলে ভ্রান্তি থাকতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষণমূলক অবস্থার প্রভাব সব পরীক্ষণ পাত্রদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করে দেওয়ার জন্য প্রতিসমভারীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন- লাল, সবুজ ও হলুদ এ তিনটি রঙের প্রতি প্রতিক্রিয়াকাল নির্ণয় করা হবে।
৫. দৈবনমুনা পদ্ধতি : সাধারণত দু’টি বিশেষ ক্ষেত্রে দৈবনমুনা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেমন- ১. যখন আমরা জানতে পারি একটি বাহ্যিক চল পরীক্ষণে প্রভাব বিস্তার করছে অথচ সেটি পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব নয় এবং ২. যখন আমরা মনে করি যে, কতকগুলো বাহ্যিক চল পরীক্ষণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথচ সেগুলো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারি না, এক্ষেত্রে আমরা ধরে নিই যে, যদি কোন বাহ্যিক চলের পরীক্ষণে প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে দৈব নিয়মানুসারে উক্ত বাহ্যিক চলগুলো পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দলে সমানভাবে কার্যকরী হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরে উল্লিখিত কলাকৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে পরীক্ষণের ফলাফল নির্ভরযোগ্য ও সঠিক হয়। এছাড়া বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পরীক্ষণের ব্যবহারিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।