উত্তর : ভূমিকা : বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় বিভিন্ন যুগে যেসব রাজবংশ বা শাসকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের মধ্যে বারো ভূঁইয়াদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্রাট আকবর বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশেই প্রভূত স্থাপন করতে পেরেছিলেন, তখন বাংলার অন্যান্য অঞ্চলে বারো ভূঁইয়া নামে প্রভাবশালী আফগান ও হিন্দু জমিদারগণ স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। বারো ভূঁইয়াগণ বাংলার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়! নিম্নে বারো ভূঁইয়াদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
বাংলায় বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস :
১. বারো ভূঁইয়াদের পরিচিতি : ভূঁইয়া অর্থ ভূস্বামী। বারো ভূঁইয়ার আক্ষরিক অর্থ বার প্রধান কিংবা বারজন প্রধান জমিদার আসলে এরা সকলেই ছিলেন ভূঁইফোড় জমিদার। অন্যদিকে বার বলতে অধিকসংখ্যক বোঝানো হয়েছে। বাংলার ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। এ সময় মুঘলদের বিরুদ্ধে যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তারাই বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত। এরা অনেকেই ছিলেন উচ্চাভিলাষী, স্বাধীনচেতা ও স্বাধীনতাকামী।
স্যার যদুনাথ সরকারের মতে, বারো ভূঁইয়ারা ছিলেন সকলেই ভূঁইফোড় জমিদার। এ সমস্ত স্বাধীনতাকামী ভূঁইয়া বা জমিদারগণ বঙ্গে মুঘল আক্রমণের বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুঘল বাদশাহকে প্রতিনিয়ত বিব্রত রেখেছিল।
২. বাংলার বারো ভূঁইয়াগণ : বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ বাংলা বারো ভূঁইয়াদের সংখ্যা বারোজন বা তার বেশি বলে উল্লেখ
করেছেন। তবে এ বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সোনারগাঁও এর ঈসা খাঁ ও তার পুত্র মুসা খাঁ, যশোহরের প্রতাপাদিত্য, বিক্রমপুরের
কেদার রায় ও চাঁদ রায়, বরিশালের কন্দর্প নারায়ণ, ফরিদপুরের মুকুন্দ রাম রায়, নোয়াখালীর লক্ষ্মণ মাণিক্য, নাটোরের কংস
নারায়ণ, বাকুড়ার বীর হাম্মীর, ভাওয়ালের ফজল গাজী, চন্দ্রপ্রতাপের চাঁদ গাজী, পুটিয়ার পীতাম্বর রায় এবং দিনাজপুরের প্রমথ রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বাহাদুর গাজী, সোনা গাজী, ওসমান খান, রাজা ছত্রজিৎ ও রাজা অনন্ত মাণিক্যও বারো ভূঁইয়াদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত
বারো ভূঁইয়াগণ মুঘল সুবাদার ইসলাম খানের হাতে পরাজিত হন। এবং মুঘল বশ্যতা স্বীকার করেন। ফলে বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় ।
উপসংহার : বারো ভূঁইয়াগণ বাংলায় মুঘল রাজত্ব প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড সংগ্রাম করেছেন তা বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয়
হয়ে আছে। পরাক্রমশালী মুঘলদের সাথে যুদ্ধে হেরে গেছেন ঠিকই কিন্তু তাই বলে তারা দমে যাননি। স্বদেশের পক্ষে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তারা বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।