উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে প্রাবন্ধিক বার্ধক্যের স্বরূপ সম্পর্কে মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষণ : যৌবন মানুষের জীবনের মূল্যবান সম্পদ। যৌবনে মানুষ পরিপূর্ণতা লাভ করে নিজের জীবন ও সমাজকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস পায়। যে সমাজে যৌবনের মর্যাদা আছে সে সমাজই প্রকৃত গতিশীল সমাজ। যৌবনের ধর্ম সৃষ্টি। প্রাণশক্তির আধার যৌবন কেবল ভোগই করে না, সে ত্যাগও করতে পারে। গৌতম বুদ্ধ ত্যাগের দ্বারা বিশ্বকে জয় করতে পেরেছিলেন। ভোগকে ত্যাগ করে তিনি যে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা মানব ধর্ম। তারই অনুসারী অশোক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন বিশাল সাম্রাজ্য। সংস্কৃত কাব্যে গৌতম বুদ্ধের স্থান নেই। সেখানে স্থান লাভ করেছেন রাজা উদয়ন। কিন্তু উদয়ন-ধর্মের অনুশীলন করে রাজা অগ্নিবর্ণ লাভ করেছিলেন রাজযক্ষ্মা। সংস্কৃত কবিগণ এ সত্যটি উপেক্ষা করেছিলেন যে, ভোগের ন্যায় ত্যাগও যৌবনেরই ধর্ম। বার্ধক্য কিছু কাড়তে পারে না বলে কিছু ছাড়তেও পারে না। বার্ধক্য জড়তার প্রতিমূর্তি। তা মানুষকে নির্জীব করে দেয়। এর কোন শক্তি নেই। তাই বার্ধক্য ত্যাগেরও নয় ভোগেরও নয়। এটা একেবারেই অকেজো।
মন্তব্য: বার্ধক্য মানবজীবনের জন্য অভিশাপ। যে সমাজে বার্ধক্য মানুষের মনকে গ্রাস করেছে সে সমাজের কোন গতি থাকে না। তা নির্জীব হয়ে পড়ে।