বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা কিভাবে ঘটে? আলোচনা কর।

উত্তর৷ ভূমিকা : সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা হলো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে উঠা বিভিন্ন সংস্কৃতির পারস্পরিক সহাবস্থান বা অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক জনগোষ্ঠী স্বতন্ত্র সংস্কৃতির অধিকারী এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যের সাথে সাথে সংস্কৃতির পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়। সংস্কৃতির এই সচলতা বা প্রবহমানতার ফলে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে উঠে তার ফলেই গড়ে ওঠে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা। বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। যা বাঙালি সংস্কৃতি নামে পরিচিত
বাঙালি সংস্কৃতি : বাংলায় বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় তথা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের নিজস্ব সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে সুগঠিত ও সমৃদ্ধ হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতি। এদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এদেশের সংস্কৃতি। তাইতো গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ গাছের নিচে বসে দুদণ্ড বিশ্রাম নেয় এবং মনের সুখে গান গায়। বর্ষা ঋতুতে গ্রাম বাংলার মানুষের প্রধান বাহন হয়ে উঠে নৌকা মাঝিরা পাল তোলা নৌকা চালায় আর গান গায়। এদেশের অসংখ্য নদী-নালায় বর্ষাকালে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। এজন্য প্রবাদ আছে যে, মাছে ভাতে বাঙালি। শরৎ কালে সাদা কাশফুল আর আকাশে সাদা মেঘের খেলা প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে। শীত ঋতুতে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা পুলির উৎসব শুরু হয়। বাঙালিদের এসব কর্মকাণ্ড সব তাদের সংস্কৃতির অংশ।
বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা কিভাবে ঘটে : সংস্কৃতি একটি জাতির জীবনযাত্রা প্রণালির সাথে সংশ্লিষ্ট। বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলা ভাষা হলো এই সংস্কৃতির অন্যতম বাহন। বাঙালিদের হাসি কান্না, ঘাত- প্রতিঘাত, চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনা সব কিছুরই প্রতিফলন ঘটে বাংলা ভাষার মাধ্যমে। এদেশে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায়ের প্রধান খাবার মাছ-ভাত অথবা ডাল-ভাত। তবে খাদ্যের উপকরণ প্রস্তুত প্রণালিও খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতিতে রয়েছে নানারকম বৈচিত্র্য। অধিকাংশ বাঙালি পুরুষের প্রধান পোশাক লুঙ্গি, শার্ট, পাজামা, গেঞ্জী, গামছা, ধুতি এবং মেয়েরা সাধারণত শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট ইত্যাদি পোশাক পরিধান করে থাকে। বাড়িঘর নির্মাণের উপকরণে রয়েছে বৈচিত্র্য, শহরে বসবাসরত মানুষের বাড়ি পাকা ইটের তৈরি এবং গ্রামে মাটি ও টিন, ছন আবার অঞ্চল বিশেষে পাকা বাড়ি দেখা যায়। অতি প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে বিভিন্ন ধরনের খেলা ও আচার-অনুষ্ঠান। বৈশাখী মেলা, নবান্ন উৎসব, পালা- পার্বণ, বাউলিয়ানা, পুতুল নাচ, যাত্রা, পালা গান, সার্কাস, সামাজিক আপ্যায়ন, বিয়ের অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এদেশের সকল ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার হিন্দুরা সত্যপীরের পাচালী করে এবং মুসলমানরা দরগায় বাতি জ্বালায় যা সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতারই পরিচয় বহন করে। আর এভাবেই গড়ে উঠেছে একটি মিশ্র বাঙালি সংস্কৃতি।