অথবা, বাঙালি দর্শনে সুফি প্রভাব সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, বাঙালি দর্শনে সুফি প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, বাঙালি দর্শনে সুফি প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : মরমি চিন্তা ভাবনা মানুষের মনের একটি সাধারণ গুণ। পরম সত্তার স্বরূপ উপলব্ধি করতে গিয়েই মরমি ধ্যানধারণার উদ্ভব। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন ধরনের মরমি ধারা প্রচলিত রয়েছে যা দর্শনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। বাংলায় বিকশিত সুফিবাদ তেমনই একটি মরমি তত্ত্ব, যা বাঙালি দর্শনে প্রভাব বিস্তার করে আছে।
বাঙালি দর্শনে সুফি প্রভাব : বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধর্মে মরমি চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। অনেকে একে ধর্মের দার্শনিক দিক হিসেবে প্রচার কারেছেন। ধর্মের ভিন্নতার কারণে মরমিবাদেরও ভিন্নতা দেখা যায়। বাংলা ভূখণ্ডে অষ্টম বা দশম শতাব্দীর দিকে মরমিবাদের আবির্ভাব ঘটে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মরমি সুফি সাধকরা বাংলায় সুফিবাদ প্রচার করেন। বাংলায় ইসলাম প্রচারের জন্য শাসক বিজেতাদের সাথে সুফিরা আগমন করেন এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন। ফলে বাংলায় নির্যাতিত বৌদ্ধ ও নিম্নশ্রেণির জনগণ সুফীবাদ গ্রহণ করে ইসলামের আদর্শে
অনুপ্রাণিত হয়। ফলে তাদের জীবনধারা চিন্তা মনন সকল ক্ষেত্রে সুফিবাদের প্রভাব পড়ে। প্রচলিত বাঙালি দর্শনের সর্বেশ্বরবাদ সুফিবাদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে একেশ্বরবাদ গড়ে উঠে। উপাসনার রীতিনীতি পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। বাঙালি অধ্যাত্মবাদ ও সাধনতত্ত্ব সুফিবাদের অধ্যাত্মবাদ ও সাধনতত্ত্বের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়।সুফিমতের আচার রীতি সহজেই এদেশের প্রচলিত রীতি যোগাযোগ ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক সাধন মার্গের সাথে মিশে নতুন সমন্বিত ধারার সৃষ্টি হয়। বাংলায় প্রভাব বিস্তারকারী চারটি সুফি তরিকা হলো চিশতিয়া, সুহরাওয়ার্দীরা, নকশবন্দিয়া ও
কাদেরিয়া। এ তরিকা বাঙালি দর্শনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, বাঙালির জীবন ও চিন্তাভাবনায় সুফি দর্শনের প্রভাব থাকায় বাঙালির দর্শনেও তার প্রভাব রয়েছে। মূলত বাঙালি দর্শনে হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনতত্ত্বের সাথে ইসলামের সুফীবাদ প্রভাব বিস্তার করে বাঙালি দর্শনকে নতুন রূপ দান করেছে। বাঙালি দর্শনে সুফি প্রভাব অনস্বীকার্য।