অথবা, বাঙালি ধর্ম ও দর্শনে শৈব মতবাদের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শন ও শৈব মতবাদ প্রত্যয়ের পারস্পরিক প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে
অথবা, বাঙালি দর্শন কিভাবে শৈব মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত?
অথবা, বাঙালি দর্শনে শৈব নতবাদের প্রভাব সম্পর্কে তোমার অভিমত দাও।
উত্তর।। ভূমিকা : প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি দর্শন বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাঙালি দর্শনে কেনর উপাদান প্রভাব বিস্তার করেছে সেগুলোকে অবৈদিক ও বৈদিক উপাদান এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বৈদিক উপাদান বেননির্ভর এবং অবৈনিক উপাদান হলো বেন বা বৈদিক সাহিত্য বহির্ভূত বিষয়। বাঙালি সর্শনে প্রভাব বিস্তারকারী অবৈদিক উপাদানের মধ্যে তন্ত্রবাদ, শাক্ত মতবাদ ও শৈব মতবাদ উল্লেখযোগ্য।
শৈব মতবাদ : পুরুষ দেবতার প্রতীক, অবৈদিক দেবতা শিবের আরাধনা থেকেই শৈব মতবাদের উদ্ভব হয়েছে।প্রাচীন সমাজে উৎপাদনের সাথে সংগতি রেখে নারী ও পুরুষের লিঙ্গকে প্রতীকিভাবে আরাধনা থেকে শিব লিঙ্গ পূজা করার রীতি চালু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন বাঙালি সমাজ থেকে বর্তমান সমাজেও শিবের গীত এবং শিব লিঙ্গের পূজার্চনার রীতি লক্ষ করা যায়। শৈব মত দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে একেশ্বরবাদী। কারণ শৈব মতবাদে শিবকেই ব্রহ্ম বলে স্বীকার করা হয় এবং শিব একই সাথে জগৎ ও জগতের অতীত। শিব ও শক্তি একই সত্তার দুটি দিক।প্রাচীন ভারতে গড়ে উঠা বিভিন্ন নগর সভ্যতায় শৈব মূর্তি আবিষ্কার হওয়ায় পণ্ডিতগণ মনে করেন এ মতবাদ জনপ্রিয় ছিল। বিশেষকরে সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত হরপ্পা ও মাহেনজোদারো নগরীতে প্রাপ্ত শিব লিঙ্গ শৈব মতবাদের অনুসারীদের অস্তিত্বের সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। শৈব ধর্মে বা মতবাদে ভক্তিবাদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এর লৌকিক দিক বাঙালি সমাজে আজও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। শৈবধর্ম তন্ত্র ও সাংখ্যতত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত ধর্ম। পাহাড়পুরে প্রাপ্ত ফলক থেকে আমরা বাংলায় শৈবধর্মের প্রসার ও প্রতিপত্তির প্রমাণ পাই। শৈব ধর্ম ভক্তি, চর্যা, ক্রিয়াযোগ ও জ্ঞান ধর্মের ব্যবহারিক পদ্ধতি। শৈবধর্মের মূলভিত্তি সাংখ্যোক্ত তত্ত্বসমূহ; কিন্তু আদি, মধ্য ও মধ্যযুগের বেদান্তের দ্বৈতবাদী ও অদ্বৈতবাদী ব্যাখ্যাও স্থান পেয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, শৈব মতবাদ বা ধর্ম বাঙালি সমাজে অতি প্রাচীন একটি মতবাদ। প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে বি পূজার যে প্রচলন ছিল আজও তা বাংলার হিন্দুসমাজে প্রচলিত রয়েছে। শিবকে বাঙালি সমাজে শক্তি ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে প্রশ্ন করা হয়েছে। বাঙালি দর্শনে অবৈদিক শৈব মতবাদের প্রভাব অনস্বীকার্য।