অথবা, কাজী আবদুল ওদুদের দর্শনচিন্তা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, বাঙালি দর্শনে কাজী আবদুল ওদুদের অবদান সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শনে কাজী আবদুল ওদুদের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : মুসলিম সাহিত্য সমাজের অন্তর্গত বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের যে কয়েকজন সদস্য রয়েছেন কাজী আবদুল ওদুদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মুক্ত বুদ্ধির প্রবক্তা, মননশীল, প্রগতিশীল শিক্ষাবিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তার দর্শনচিন্তায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিন্তাবিদদের প্রভাব লক্ষণীয়। এদের মধ্যে জার্মান কবি গ্যাটে, রাজা রামমোহন রায়, মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথের নাম অগ্রগণ্য। তিনি পশ্চাৎপদ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, গোঁড়া মুসলিম সমাজে মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব জাগ্রতকরণে বিশেষ অবদান রাখেন।
বাঙালি দর্শনে কাজী আবদুল ওদুদের অবদান : কাজী আবদুল ওদুদ বাঙালি দর্শনে নিম্নোক্ত অবদান রেখেছেন :
যুক্তিবাদিতা : কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন মনেপ্রাণে একজন যুক্তিবাদী দার্শনিক। তিনি যুক্তিকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, সাহিত্য সমাজ শুষ্ক জ্ঞান ও চিন্তা চর্চা করেনি, তা ছিল স্বাধীন ও মুক্ত। এতে কোনো ভাবাবেগ বা উগ্র মনোভাব ছিল না, এর পিছনে যুক্তিবাদী মন এবং সত্য সন্ধানী দৃষ্টি ছিল।আবদুল ওদুদ বিনা বিচারে কোনো মতকে গ্রহণ বা বর্জন করেননি। যুক্তির বিচারে যেটিকে ভালো বলে মনে হয়েছে তিনি সেটাকে গ্রহণ করেছেন এবং যেটিকে মন্দ বলে মনে হয়েছে সেটাকে বর্জন করেছেন। তিনি রামকৃষ্ণের “যত মত তত পথ” উক্তিটির বিরোধিতা করেছেন। বাংলার জাগরণ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন রাম কৃষ্ণের এ মত একটি শিথিল চিন্তা মাত্র। তিনি মনে করেন এর চেয়ে এটা বলা ভালো যে সকল ধর্মের ভিতরেই যথেষ্ট মিথ্যা বা অসার্থক ভাবনা রয়েছে; মানুষকে সেসব কাটিয়ে উঠতে হবে। ধর্মের অপর নাম হলো মনুষ্যত্ব সাধন। আনুষ্ঠানিক ধর্ম যদি মনুষ্যত্ব সাধনের সহায় হয় তাহলে, তবেই তা ধর্ম, তা না হলে তা আচার-অনুষ্ঠান মাত্র। আবুল ফজল আবদুল ওদুদের যুক্তিনিষ্ঠতা স্বীকার করে বলেন শুভ বুদ্ধির সাথে যুক্তিনির্ভরতাই কাজী আবদুল ওদুদের রচনার বৈশিষ্ট্য। গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি মুক্ত বুদ্ধির প্রয়োগ করেছেন। তার তাই তাকে যুক্তিবাদী বাঙালি দার্শনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কাজী আবদুল ওদুদ একজন সত্যিকারের যুক্তিবাদী মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন দার্শনিক। তিনি ধর্ম ও জীবনকে যুক্তির আলোকে আলোচনা করেছেন এবং যুক্তির মাধ্যমে বিষয়বস্তুর সত্য বা অসত্য নির্ধারণ করে তা গ্রহণ বা বর্জন করেছেন। বাঙালি দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে তার অবদান দার্শনিক সমাজে স্বীকৃত। একজন প্রগতিশীল দার্শনিক হিসেবে বাঙালি দর্শনে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন।