অথবা, কোন কোন জাতির মিশ্রণে বাঙালি নৃগোষ্ঠী গঠিত হয়েছে?
অথবা, বাংলাদেশের মানুষের নৃগোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : বাঙালি জনগোষ্ঠী বহুকাল থেকে নানা জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। বাঙালির ভাষা যেমন সংকর তেমনি এ জাতিও একটি সংকর জাতি। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালির এ নৃকাঠামো গড়ে উঠে । এখানে নানা জাতি গোষ্ঠীর মিশ্রণের তথ্য পাওয়া যায়।
যেসব জাতির মিশ্রণে বাঙালি নৃগোষ্ঠী গঠিত : সুপ্রাচীন কাল থেকে নানা জাতি গোষ্ঠীর মিলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার স্বকীয়তা লাভ করে। এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম জাতি গোষ্ঠী হলো :
১. আর্য-অনার্য নরগোষ্ঠী,
২. নেগ্রিটো,
৩. অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েভ,
৪. দ্রাবিড়,
৫. মঙ্গোলয়েড বা ভোট চীনীয়,
৬. আলপাইন,
৭. নার্ডিক।
এছাড়া আর্য পরবর্তী আরো অনেক ধারার জনগোষ্ঠী বাংলায় আসে এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো :
৮. মাক জাতি,
৯. সেমিটিক গোত্রের আরব মুসলমান ও
১০. ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি। এভাবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, আল পীর জনগোষ্ঠীর সাথে আর্য, মঙ্গল, আরব, তুর্কি প্রভৃতি জাতির সংমিশ্রণে এবং দীর্ঘ দিনের অনুশীলন, গ্রহণ-বর্জন এবং রূপ থেকে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাঙালি জাতি ও তার জনজীবন গড়ে উঠেছে। মূলত বাঙালি জাতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর রক্তধারার সংমিশ্রণে সৃষ্টি এক বিচিত্র জনগোষ্ঠী। তবে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গড়ে উঠলেও বাঙালি জাতি বর্তমানে একটি স্মরণীয় সত্তায় উন্নীত হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাঙালি জাতি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠলেও বর্তমানে একটি স্বকীয় জাতিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে বাঙালি বর্তমানে স্বাধীন জাতি হিসেবে এক উচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে আছে।