উত্তর : ভূমিকা : সুফিদর্শন একটি আধ্যাত্মিক দর্শন। সুফি সাধকের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সান্নিধ্যে থেকে তার দীদার লাভ করা। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ায় জন্য সুফিকে অনেক বাধা বিপত্তি পাড়ি দিতে হয় এবং সহ্য করতে হয় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দুঃখ, কষ্ট। সুফিবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভ। এই নৈকট্য লাভের জন্য পার্থিব জীবনের সকল মায়া-মমতার বন্ধন ছিন্ন করে অনন্ত অসীমের
সনঙ্গে মিলনের জন্য সুফিদের সাধনা করতে হয়। এই সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার প্রশ্নের সুফিবাদের মধ্যে তিনটি অবস্থা বা স্তরের
নাম ওজদ, ফানা ও বাকা। বাকা পর্যায় হচ্ছে সুফি সাধনার সর্বোচ্চ স্তর।
২. বাকা : বাকা হচ্ছে সুফি মূলনীতিগুলোর মধ্যে শেষ স্তর। অর্থাৎ ফানার শেষ আর বাকার শুরু। আল্লাহর সাথে সম্মিলন অর্জনের সদর্থক দিকটি হলো বাকা। বাকার অর্থ
আল্লাহর স্বরূপে, গুণে প্রতিষ্ঠা লাভ। একজন সাধক বাকা প্রাপ্ত হলে তখন আল্লাহ্র অনুভূতি সাধকের অনুভূতি হয়ে যায়। আল্লাহর অসীম চেতনাবোধই তার মহাচৈতন্য। এসময় সাধক
তার অস্তিত্ব আল্লাহর অসীম অস্তিত্বের সাথে একাত্ব ও একক অবস্থা অনুভব করেন। এ স্তরের সাধকের স্বীয় অস্তিত্ব আল্লাহর অস্তিত্বে স্থিতি লাভ করে এবং তার সত্তা ও গুণ তখন স্বয়ং আল্লাহই হয়ে যায়। হযরত জালাল উদ্দিন রুমী (র.) এই স্থরে আরোহণ করেই বলেছিলেন : “আমি তুমি হলাম, তুমি আমি
হলে আমি দেহ এবং তুমি প্রাণ, এরপর যেন কেউ বলতে না পারে যে, আমি একজন আর তুমি আর একজন।” এই স্তরের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহ্ আল্লাহ্ জপতে জপতে মানুষই আল্লাহময় হয়ে যায়।” মোট কথা এই স্তরে সুফি সাধক আল্লাহর চিরন্তন, শাশ্বত ও অসীম সত্তায়
স্থায়ীভাবে স্থিতি লাভ করেন। সাধক এ স্তরে কুতুব, গাউস, আরিফ বিল্লাহ প্রভৃতি লবাব ও সম্মানের অধিকারী হন। সাধক এসময় অমরত্ব লাভ করে চিরজীবী ও চিরঞ্জীব হন। এ সময় জীবন ও মৃত্যু সাধকের ইচ্ছাধীন হয়ে যায়। অর্থাৎ সাধক এস্তরে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহময় হয়ে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদের মূলনীতিগুলোর মধ্যে যেগুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে বাকা অন্যতম। সুফিবাদ প্রেমের দর্শন,
আল্লাহর নৈকট্য লাভের দর্শন ও আল্লাহময় হয়ে যাওয়ার দর্শন। সুফিরা যেকোনো কিছু থেকে আল্লাহ প্রেমকেই অত্যাধিক মূল্য
দেন। আর আল্লাহর প্রেম লাভ করার উল্লেখযোগ্য একটি স্তর হলো ‘বাকা’ ।