অথবা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান উপজীবিকা হলো কৃষি এবং দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। কিন্তু কৃষির আধুনিকায়নের অভাবে এদেশের কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারছে না। আবার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না, ফলে এদেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। যার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ : বাংলােদশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমধানের জন্য নিম্নোক্ত কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যেমন-
১. কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন : বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই এদেশের উন্নতির জন্য সর্বামে প্রয়োজন কৃষির আধুনিকায়ন। তাই কৃষির সমস্যাগুলো দূরীকরণে কৃষির আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
২. শিল্পের উন্নয়ন : কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি এদেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিল্পের আধুনিকায়ন। এজন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিল্পনীতি, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বেসরকরি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বেসরকারীকরণ, বিদেশি উদ্যোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে শিল্পোন্নয়ন করা যেতে পারে।
৩. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : জনসংখ্যা বিস্ফোরণ এদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হওয়ায় মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষাবিস্তার ও জনসম্পদের মান উন্নয়নে কাজ করতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ত
৪. প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের সদ্ব্যবহার ও পূর্ণব্যবহার : বাংলােদশে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ও সদ্ব্যবহার করার মাধ্যমে এদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিশ্চিত করা যায়। এর সাথে সাথে প্রয়োজন এদেশের ব্যাপক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া।
৫. আর্থসামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। যেমন— পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, সেচ, বাঁধ, বন্দর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা জরুরি।
৬. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হলো খাদ্যঘাটতি, কৃষির উন্নয়ন ও সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে এদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। তাই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন অপরিহার্য।
৭. কারিগরি জ্ঞানের উন্নতি : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য কারিগরি জ্ঞান আবশ্যক। কৃষি ও শিল্পখাতে আধুনিক কারিগরি জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পের বিকাশ সাধন করতে হবে। এদেশের জনসম্পদের উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কারিগরি জ্ঞানের উন্নয়ন করতে হবে।
৮. পুঁজি গঠন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে। পুঁজি সঞ্চয়ের মাধ্যমেই পুঁজি গঠন করলেই তবে অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।
৯. শিক্ষার প্রসার : অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম শক্তি হলো শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়। জনগণের উন্নয়নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা তথা প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই উন্নয়নের পথে বাধা দূর করা সম্ভবপর।
১০. বৈদে
শিক সাহায্যের উপর নির্ভরতা হ্রাস : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু বৈদেশিক সাহায্যের উপর অধিক নির্ভরতা দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে। তাই অর্থনৈতিক সমস্যাবলি দূরীকরণার্থে দেশীয় সম্পদ সংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়।
১১. প্রশাসন ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন : অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন। এর জন্য প্রশাসন কাঠামোকে হতে হয় জনকল্যাণমূলক ও দক্ষ। শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রের সমস্যাবলি দূরীকরণের জন্য প্রশাসনের দক্ষতা অতীব জরুরি।
১২. যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা : বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত দেশ বাংলাদেশ। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা। সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সুষম বণ্টন ব্যবস্থার ভিত্তিতে রচিত উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যাবলির কারণে এদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তাই এ সমস্যা মোকবিলায় সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে এবং উপযুক্ত সমস্যাবলির সমাধান করতে হবে। তাহলে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।