উত্তর :ভূমিকা : বাংলায় মুঘল সুবাদারদের মধ্যে সুবাদার শায়েস্তা খান ছিলেন অন্যতম। তিনি দুই পর্বে মোট ২৩ বছর বাংলার
সুবাদার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রণকুশলী সেনাপতি ও শ্রেষ্ঠ বিজেতা হিসেবে তিনি বাংলার ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছেন। তার সময়ে এদেশে সুখ সমৃদ্ধি ছিল এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার বিশাল অবদান
রয়েছে। এজন্যে ঐতিহাসিক জন স্টুয়ার্ট বলেছিলেন, “শায়েস্তা খানের স্মৃতি এখন পর্যন্ত এ দেশে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।”
নিম্নে শায়েস্তা খানের কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো :
→ শায়েস্তা খানের কৃতিত্ব :
১. বিভিন্ন কার্যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ : সম্রাট আওরঙ্গজের কর্তৃক শায়েস্তা খান বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি অন্যান্য সুযোগ্য কর্মকর্তা এবং তার চারপুত্রের সহযোগিতায় এ দেশে শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন। তিনি সর্বপ্রথম শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন। তিনি শিল্পী, ব্যবসায়ী ও আগন্তুকদের ওপর আরোপিত শুল্ক রহিত করেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের বরখাস্ত করে সৎ কর্মচারী নিয়োগ করে প্রশাসন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন করেন।
২. কুচবিহার রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ : পূর্বের সুবাদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর কুচবিহার পুনরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করলে শায়েস্তা খান বিদ্রোহী শাসনকর্তা প্রাণ নারায়ণকে পরাজিত করে কুচবিহার দখল করেন।
৩. জয়ন্তিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ : জয়ন্তিয়ার রাজা পূর্ব প্রতিশ্রুত সন্ধি ভঙ্গ করে পুনরায় সিলেটে আক্রমণ চালিয়ে লুটতরাজ শুরু করে। এতে শায়েস্তা খান ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। প্রাণ ভয়ে জয়ন্তিয়ার রাজা পলায়ন করলে তা মুঘল সাম্রাজ্য ভুক্ত হয় ।
৪. চট্টগ্রাম বিজয় : মীর জুমলার মৃত্যুর পর আরাকানের রাজা চট্টগ্রাম অধিকার করেন। শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম বিজয়ের জন্য নৌ-
সেনাপতি ইবনে হোসেন ও পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানকে প্রেরণ করেন ১৬৬৬ সালে মুঘল বাহিনী আরাকানের নিকট হতে চট্টগ্রাম দখল
করে। ফলে সেখান হতে মগ ও ফিরিঙ্গী দস্যুরা পলায়ন করে।
৫. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতা অর্জন : বাংলার অর্থনীতি বিকাশে শায়েস্তা খানের অসামান্য কৃতিত্ব রয়েছে। তিনি বিধবা মহিলা, অভিজাত ব্যক্তিদের লাখেরাজ বা নিষ্কর জমি দান করতেন। তিনি প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা দান করতেন। তার আমলে পণ্যের দাম এতই সস্তা ছিল যে, টাকায় আট মণ চাল পাওয়া
যেত। বিদেশি পর্যটক বার্নিয়ার বলেন, “বিচিত্র পণ্য সম্ভারে তখন এদেশ ভরপুর ছিল। এসব পণ্য সম্ভার বিদেশি বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।”
উপসংহার : সুবাদার শায়েস্তা খানের শাসনামলে ছিল বাংলার জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি তার বিভিন্নমুখী কার্যাবলি ও কৃতিত্বের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার
শাসনকাল ছিল এদেশের জন্যে সুখ ও সমৃদ্ধির যুগ। তাইতো শায়েস্তা খানের কৃতিত্বের জন্য বাংলার মানুষ আজও তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ।