উত্তর : বাংলাদেশ নামক দেশটি দীর্ঘকাল ধরে বিদেশিদের শাসনাধীন ছিল। ফলে বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা যাবতীয় ঐতিহ্যের অবক্ষয় ঘটেছিল। পরাধীনতার গ্লানিতে আচ্ছন্ন বাঙালি হিন্দু-মুসলমান তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলতে বসেছিল । ইংরেজদের আধুনিক শাসন-শোষণের শিকার বাঙালিরা যখন দিশেহারা হয়ে ঘরমুখো হতে বাধ্য হয়েছিল তখন ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, অক্ষয় কুমার দত্ত, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীরা বাংলা ও বাঙালিকে জাগিয়ে তুলতে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলার জাগরণের প্রাণপুরুষ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। এ সময় এক ইংরেজ শিক্ষক ডিরোজিও কলকাতার যুব সমাজের শিক্ষিত একটি অংশকে আধুনিক ও প্রগতিশীল করে তুলতে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ঊনবিংশ শতকের মধ্য থেকে শেষভাগ পর্যন্ত এসব মনীষীর পদচারণায় মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। এরা বাঙালি সমাজের রন্ধ্রে প্রবিষ্ট কুসংস্কার গোঁড়ামি, অন্ধত্ব ও পশ্চাদপদতা দূর করার লক্ষ্যে স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্র থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। বাঙালিকে আধুনিক করে তুলতে এসব মনীষী নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এসব হিন্দু মনীষীর কর্মতৎপরতার পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানদের অবস্থান সম্পর্কে প্রাবন্ধিক যা বলেছেন তা হলো “এরই সাথে মুসলমানের জাগরণ যদি সত্য হয়, তাহলে কিছু বেশি সুফল লাভের সম্ভাবনা। যে গুরু তাকে উপদেশ দিয়েছেন ‘ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নামায পড়ো’ তাঁর অনুবর্তিতায় বস্তুতন্ত্র হওয়া তার পক্ষে স্বাভাবিক। আবার সেজন্যই বস্তুর শিকলে বন্দী হওয়া ও তার পক্ষে কম স্বাভাবিক নয়। ফলে মুসলমানের হয়েছেও তাই। এ মনের বন্ধন সহজভাবে চুকিয়ে দিয়ে মুসলমান মানবতার ধ্বজা বহন করার যোগ্য হবে কি না, অথবা কতদিনে হবে, তা জানি না। যদি হয়, তবে বাংলার ধর্ম ও চিন্তার ক্ষেত্রে তার দাম কম হবে না।”