বাংলায় সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতিমূলক সম্পর্কের কারণগুলো লিখ ।

উত্তর ভূমিকা : ‘সুলতানি শাসকদের উদারনৈতিক শাসনতান্ত্রিক নীতি এবং ইসলাম ধর্ম তথা মুসলিম সংস্কৃতির প্রতাক হিন্দু সমাজে এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং হিন্দু- ও সমঝোতার মাধ্যমে উভয়
মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয় . সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠে। পাশাপাশি বসবাসের মাধ্যমে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই সহযোগী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেন। যার ফলে শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু-মুসলিম সহ অবস্থান সম্ভব হয়ে উঠে।
→ সুলতানি আমলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিমূলক সম্পর্কের কারণসমূহ : সুলতানি আমলে বাঙলার দুটি বৃহৎ সম্প্রদায় হিন্দু
ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতিমূলক সম্পর্কের উন্নয়নে কারণসমূহ নিচে আলোকপাত করা হলো :
১. সুলতানি শাসকদের সহিষ্ণুনীতি : ঐতিহ্যগতভাবে সুলতানি আমলে বাংলার মুসলিম শাসনকর্তাদের রাষ্ট্রনীতিতে, সহিষ্ণুতা ছিল মৌলিকনীতি। হিন্দু-মুসলিম সমঅধিকার, সমমর্যাদার নীতি বিশ্বাসী ছিলেন। সুলতানগণ শাসনব্যবস্থাকে
দীর্ঘ ও সার্থক করে তোলার জন্য সহিষ্ণুনীতি ছিল অন্যতম নিয়ামক। এই সহিষ্ণুনীতি বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেছিল।
২. হিন্দু-মুসলিম অভিন্ন স্বার্থ : প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং পারস্পরিক অধিকারের স্বার্থ হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই
সমসূত্রে বাঁধা ছিল । এজন্য শান্তিপূর্ণ পারস্পরিক সহ-অবস্থান ছিল ।
৩. সহযোগিতামূলক পরিবেশ : সুলতানি তথা মুসলমান শাসনকর্তাদের রাজনৈতিক উপযোগিতার প্রয়োজনে হিন্দুদের সাথে একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী ছিল। এই প্রয়াস উভয় সম্প্রদায়কে পরস্পর সান্নিধ্যে আসতে ও
সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা যুগিয়েছিল।
৪. পারস্পরিক সংস্কৃতি ও মতবাদ : বহুকাল ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে উভয় সম্প্রদায় তথা হিন্দু ও মুসলমানরা একে অন্যের সংস্কৃতি ও মতবাদগুলো বুঝতে সক্ষম হয় এবং এভাবেএকে অন্যের সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মায়। ফলে হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্য ও
সম্প্রীতিমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠে।
৫. পরস্পর প্রতিবেশী : মুসলিম শাসকেরা একের পর এক বিজয়াভিযানের মাধ্যমে মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমা বিস্তৃত করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও তারা হিন্দুদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সহযোগী প্রতিবেশীতে পরিণত হন।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, সুলতানি আমলে বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় ছিল বাংলা
মায়ের দুটি নয়ন ও এক প্রদীপের দুটি দীপ শিখা। সামাজিক আদান-.প্রদান, অর্থনৈতিক লেন-দেন ও চিন্তাধারার আদান-প্রদানের মাধ্যমে একে অন্যের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/