উত্তর : ভূমিকা : আল্লাহ প্রেম ও আধ্যাত্মিক ধ্যানভিত্তিক অভিনব চিন্তাধারা হচ্ছে সুফিবাদ। মুতাযিলা ও আশারিয়া সম্প্রদায়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলামে এ ভাবধারার আত্মপ্রকাশ হয় এমন কথা অনেকে বিশ্বাস করেন। সুফিসাধকেরা পার্থিব সকল প্রকার মায়া-মমতার বন্ধনকে ছিন্ন করে অনন্ত-অসীমের সাথে মিলনের গোপন অভিসারে যায়। আত্মশক্তি ও নৈতিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইসলামে যে মরমি ভাবধারার উৎপত্তি হয় তাই সুফিবাদ ।
বাংলায় সুফিবাদের প্রভাব/অবস্থা : দশম শতকে বাংলায় সুফিবাদের আবির্ভাব হয়। এসময় ইরান, ইরাক, অন্যান্য আরব
দেশ হতে মুসলিম দরবেশ ও সুফি সাধকেরা এদেশে আসতে থাকে। চতুর্দশ শতক থেকে বাংলায় সুফিবাদ ক্রমান্বয়ে প্রসার লাভ করতে থাকে। সুফি দরবেশরা এদেশে এসে মসজিদ,
মাদ্রাসা ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। বাবা আদম, শহীদ, শাহ সুলতান রুমী, শাহ-সুলতান মহেশ্বর, মুকদম শাহ, শাহ-জাশল, শাহ জামাল, হযরত দেওয়ান, শাহ হোসেন, শাহ মুখদুম, জালাল উদ্দিন রূপসা প্রভৃতি সুফিগণ অন্যতম ছিলেন। এরা ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলায় আসেন। বাংলার বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন স্থানে এসকল সুফি সাধকের মাজার আছে। বাংলার ঘরে ঘরে এদের প্রভাব পড়ে। সাধারণ মানুষ এদেরকে অনেক সম্মান
করেন। ‘সুফিরাই বাংলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসার করেন। কালের আবর্তনে সুফি দর্শন এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাবধারার সাথে
মিশে গেছে। সুফিদের কর্ম, সংস্কৃতি, চিন্তা, কথা, পোশাক, ব্যবহার, আচার-আচরণ প্রভৃতি সাধারণ জনগণ গ্রহণ করতে থাকে। তাদের মুগ্ধ করা ব্যবহারে অনেক মানুষ মুসলিম হন ।
উপসংহার : পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সুফি দর্শন মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে বিশ্বাসী। এ দর্শনের উদ্দেশ্য মানুষকে প্রেমের পথে পরিচালিত করে পরমার্থের জ্ঞানলাভে
উদ্বুদ্ধ করা। বাংলায় সুফিরা শুধু আধ্যাত্মিক কথা বলেই ক্ষান্ত হন-নি, তারা মানুষে মানুষে সমতার ভ্রাতৃত্ববোধ এর কথা বলে প্রেম দর্শন প্রচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।