অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার বর্ণনা দাও।
অথবা, বাংলাদেশে কখন স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা ইতিহাসে বিরল। সুসংগঠিত পাকবাহিনীর সাথে অসম সংগ্রামে বাংলার দামাল ছেলেরা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় এবং বহু বাধা বিপত্তি অতিক্রম
করে অবশেষে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য পুষ্ট হয়ে বাংলাদেশকে পশু শক্তির কবল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ নয় মাসে বাংলাদেশে হাজারো ধারায় রক্তস্রোত প্রবাহিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার জন্য আত্মদান করেছে কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ নরনারী, সম্ভ্রম হারিয়েছেন কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মহীয়সী মাতা ও ভগ্নি, গৃহহারা হয়েছে অন্ততপক্ষে এক কোটি বাঙালি এবং ছিন্নমূল ও সর্বহারা হয়েছেন অসংখ্য মানব সন্তান। বাংলাদেশে স্বাধীনতা সূর্য উদিত হয়েছে তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে। এখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, নেতৃত্ব ও কৌশল সম্পর্কে যথাপরিসরে আলোচনা করা হয়েছে।
স্বাধীনতার ঘোষণা : ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচার আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে মধ্যরাতের কিছু পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি ঢাকায় দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং ওয়্যারলেসে চট্টগ্রামে ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের নিকট এ মর্মে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়ে তা সারা দেশে প্রচারের নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর এ বার্তা পেয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান, এম এন এ ২৬ মার্চ দুপুরবেলা চট্টগ্রাম বেতার থেকে তা স্বকণ্ঠে প্রচার করেন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুর ঘাটে স্থানান্তরিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (চট্টগ্রাম বেতারের নতুন নাম) থেকে মেজর জিয়াউর রহমান (মেজর জিয়া) বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার অপর একটি ঘোষণা প্রচার করেন। কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আবুল কাশেম সন্দ্বীপসহ আরও কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বারবার প্রচার করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা হয় মূলত ২৫ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তানবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ঐদিন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধনিতার ঘোষণা দেন। যা আমাদের বিজয়ের চেতনাকে আরো বেগবান করে।