অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় লর্ড রিপনের প্রস্তাবের ভূমিকা কী ছিল?
অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় লর্ড রিপনের প্রস্তাবের ভূমিকা তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় লর্ড রিপনের প্রস্তাবনার ভূমিকা বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় লর্ড রিপনের প্রস্তাবনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা : সিপাহি বিপ্লবের পর ইংরেজ সরকার অনুভব করেন, এদেশ শাসন করতে হলে শুধু শোষণ নয়, স্থানীয় এলাকায় উন্নতি সাধনের নীতি গ্রহণ করতে হবে। ১৮৭০-১৮৮০ সালের মধ্যে ইংরেজ সরকার কয়েকটি প্রদেশে যাতায়াত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় কমিটি জনসাধারণকে স্থানীয় সমস্যার ব্যাপারে শাসনকার্যে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল।
বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লর্ড রিপনের প্রস্তাবনার গুরুত্ব : বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লর্ড রিপন পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একজন উদার নৈতিক মনোভাবের শাসক ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। নচেৎ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারনী দিকনির্দেশনা দিয়ে স্থানীয় উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। লর্ড রিপন অনুভব করেন যে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে উপমহাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠার সুযোগ পাবে। তাই তিনি ১৮৮২ সালে কতকগুলো প্রস্তাবনা পেশ করেন। তার প্রস্তাবনার মূলনীতিগুলো ছিল নিম্নরূপ :
১. মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের ন্যায় স্থানীয় বোর্ড চালু করা হবে। যেমন- মহকুমা বোর্ড, তহসিল বোর্ড বা তালুকা বোর্ড।
২. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে স্থানীয় জনসাধারণকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩. দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অবশ্যই বেসরকারি হবে। উন্নত এলাকায় কিংবা সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে বোর্ডের সদস্য হবেন।
তৎকালীন ব্রিটিশ মন্ত্রী গ্রার্ভস্টোনও স্থানীয় প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের পক্ষপাতি ছিলেন বলেই তিনি লর্ড রিপনের প্রস্তাবকে সমর্থন জানান। ১৮৮২ সালের ১৮ মে লর্ড রিপন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের উপর প্রস্তাবনা ঘোষণা করেন। দুর্ভাগ্যবশত লর্ড রিপনের প্রস্তাবসমূহ যথাযথভাবে কার্যকর হতে পারে নি, কারণ প্রাদেশিক গভর্নরগণ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করার জোর সমর্থন দিলেন। অনেক ইংরেজ লর্ড রিপনের এ ধরনের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, “এ দেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে”।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও লর্ড রিপনের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়িত হয়নি, তথাপি আমরা যে স্বায়ত্তশাসনের সুফল ভোগ করছি তার সিংহ ভাগ কৃতিত্বই লর্ড রিপনের। সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লর্ড রিপনের প্রস্তাবনাই মুখ্য ভূমিকা রাখে এবং তিনিই আমাদের দেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।