অথবা, আমাদের দেশে শিশুদের সামাজিক সমস্যাগুলো কী কী?
অথবা, শিশুরা কী কী সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তা বর্ণনা কর।
অথবা, যে সকল সামাজিক সমস্যা শিশুদের বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে সেগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ আজকে যে শিশু আগামী দিনে সেই দেশকে নেতৃত্ব দেবে।কিন্তু জীবনের শুরুতেই যদি তারা সমস্যায় পতিত হয় তাহলে তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আমাদের দেশে বর্তমানে এ অবস্থা চলছে। নি েবাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত যেসব সামাজিক সমস্যা রয়েছে তা আলোচনা করা হল ।
বাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যা :
১. পুষ্টিহীনতা : বাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হল পুষ্টিহীনতা। WHO এর জরিপে দেখা যায় এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার। অন্যদিকে, গ্রামে শতকরা ৯০ ভাগ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভূগছে। দরিদ্রতা, অশিক্ষা, পুষ্টিজ্ঞানের অভাব ইত্যাদি কারণে শিশুরা পুষ্টিহীনতার শিকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০০ সালের জরিপ মতে এদেশে পুষ্টিমানসম্পন্ন শিশুর হার ১১.৫%। চরম পুষ্টিহীনতা, মাঝারি পুষ্টিহীনতা ও মৃদু পুষ্টিহীনতার হার যথাক্রমে ২.৪%, ৩৪.৭% ও ৫০.৭%। পুষ্টিহীনতার কারণে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।শিশুরা নানারকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হচ্ছে।
২. নিরক্ষরতা : বাংলাদেশের শিশুদের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হল নিরক্ষরতা। প্রতিবছর এদেশে ২২ লক্ষ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ জন্মে দরিদ্র পরিবারে। দারিদ্রতার কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। জাতিসংঘের হিসাব মতে ৮৩% শিশু স্কুলে যায়। ঝরে পড়ে ৩%। বাকি শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে। অর্থাৎ নিরক্ষর থাকে। সরকার অবশ্য সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। তবে নানা প্রতিকূলতার কারণে তা সফল হচ্ছে না। জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট পোল এ নিরক্ষরতা দূরীকরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।
৩. শিশুশ্রম : শিশুশ্রম বাংলাদেশে শিশুসংক্রান্ত অন্যতম সামাজিক সমস্যা। ILO এর হিসেব মতে, বাংলাদেশের ১০% শিশু শ্রমের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথেও শিশুরা জড়িত। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনা এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। বাংলাদেশের বাসাবাড়ি, কলকারখানা, বিড়ির কারখানা, ওয়ার্কশপ, গার্মেন্টস শিল্পে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে।
৪. শিশুর অপব্যবহার : শিশুর অপব্যবহার বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম।বাংলাদেশে শিশুদের যৌনাচারে বাধ্য করা হয়। শিশুদের ধর্ষণও করা হয়ে থাকে। রাজশাহীর শিশু মিলি ধর্ষণ ও হত্যা এর উদাহরণ। এছাড়া বাসাবাড়িতে কাজের মেয়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের অপব্যবহারের কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও পিতামাতা কর্তৃক অবহেলা করা হয়।
৫. প্রতিবন্ধিতা : বাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত অন্যতম সামাজিক সমস্যা হল প্রতিবন্ধিতা। বাংলাদেশে নানাকারণে প্রতিবছর অনেক প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ করে। এসব শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারে না। ফলে তারা পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়। এসব প্রতিবন্ধীদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো হয়।
৬. লিঙ্গ বৈষম্য : বাংলাদেশে শিশু সংক্রান্ত অন্যতম সামাজিক সমস্যা হল লিঙ্গ বৈষম্য। লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার অবশ্য নারীরা। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ পরিবারে ছেলে শিশুদের যেভাবে লালনপালন ও আদর যত্ন করা হয়।
মেয়েদের বেলায় তা করা হয় না। তাছাড়া অনেক পরিবারে মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করলে মেয়ে শিশু ও মাকে অবহেলা করা হয়। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে সাথে মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও কন্যাশিশুদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক সমস্যা থাকবেই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এদেশে শিশু সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যাগুলো যেভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যদি থামানো না যায় তাহলে অদুর ভবিষ্যতে দেশ ভয়াবহ সংকটে পড়বে। তবে আশার কথা সরকার শিশু সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যা সমাধানকল্পে কঠোর আইন প্রণয়ন করছে। এর সাথে জনগণকেও সচেতন ও সজাগ হতে হবে। তবেই এ থেকে মুক্তি সম্ভব।