উত্তর : ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের ২৫% জনগণ শহরে বসবাস করে। বেকারত্ব ঘোচাতে হাজারো মানুষ পাড়ি জমায়। কিন্তু এতে শহরের লোকসংখ্যা যাচ্ছে বেড়ে। ফলশ্রুতিতে সম্ভব হচ্ছে না দ্রুত সুযোগ-সুবিধার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা। শহরগুলো আর্থিক ও সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত শহরের জনগণের জীবন মানোন্নয়নে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি চালু হয়েছে। শহর সমাজসেবা কর্মসূচিতে শহরবাসীর সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকে। শহরবাসীর শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ও কল্যাণ সাধনে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। এজন্য শহর সমাজসেবা কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। এজন্য শহর সমাজসেবা কর্মসূচির
সমস্যাগুলোরও যথার্থ সমাধান জরুরি।
শহর সমাজসেবা কর্মসূচির সমস্যা সমাধানের উপায় ঃ শহর সমাজসেবা কর্মসূচির সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের
নিমিত্তে কিছু উপায় নিম্নরূপ :
১. যথার্থ পরিকল্পনা গ্রহণ : পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি পরিকল্পনাহীনভাবে গৃহীত হবার ফলে বাস্তবায়িত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই দক্ষ সমাজকর্মী ও শহর উন্নয়নকর্মীদের অংশগ্রহণে যথার্থ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি বা
ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে।
২. সুষ্ঠু তদারকি ঃ সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি ত্রুটিমুক্ত হতে বাধ্য। গৃহীত কর্মসূচিগুলোর ওপর নিয়মিত তদারকি পরিচালনা এবং সময়ে সময়ে যুগোপযোগী পরিবর্তন ও পরিবর্ধন আনয়নের মাধ্যমেই শহর সমাজসেবা কর্মসূচি গতিশীল হবে।
৩. কর্মীদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগাদির ব্যবস্থা ঃ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগাদির সৃষ্টি করে কর্মীদের উৎসাহী করে তোলা ।
৪. শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধি ঃ শিক্ষার মাধ্যমে একটি মানুষ অতি সহজেই বুঝতে পারে তার আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলো ও তার সমাধানের উপায়। সুতরাং, শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শহরের সর্বস্তরের মানুষকে স্বনির্ভর ও স্বীয় সমস্যা মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলেও শহর সমাজসেবা কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে।
৫. সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন ঃ বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কোন নীতিমালা নেই । যার দরুন এর কর্মসূচি জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং সরকারিভাবে যথার্থ নীতিমালা এ সম্পর্কিত প্রণয়ন হলেই শহর সমাজসেবা কর্মসূচি সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এ
৬. বৃত্তিমূলক কর্মসূচির চালু ঃ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কর্মসূচিকে আরো বেগবান
করা সম্ভব। শহরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ও স্বল্প মজুরি। এর জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকারত্বের অবসানে ঘটানো যায়।
৭. পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ : পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ব্যতীত সরকার শহর সমাজসেবা কর্মসূচির কোনোদিনই সফলতা বয়ে আনতে পারে না। সরকারের উচিৎ শহরের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত অর্থ এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া। তবেই শহর সমাজসেবা কর্মসূচি গতিশীল হবে।
৮. যোগ্য প্রশিক্ষক নিয়োগদান : সৎ ও যোগ্য প্রশিক্ষক নিয়োগদানের মাধ্যমেই এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব। তাই প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ ও যোগ্য প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে
নিয়োগদানের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি বেগবান হয়।
৯: নিয়মিত গবেষণ
া ও মূল্যায়ন ঃ নিয়মিত গবেষণা ও মূল্যায়ন শহর সমাজসেবা কর্মসূচির ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। শহর সমাজসেবা কর্মসূচির জন্য কর্মসূচির গৃহীত নীতি ও অন্যান্য কার্যকলাপের নিয়মিত গবেষণা ও মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই এর দোষ-ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে সমস্যা সমাধানযোগ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
১০. কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা জাগ্রতকরণ : বাংলাদেশে শহর সমাজসেবা কর্মসূচির সাথ জড়িত কর্মকর্তারা এটাকে সরকারি কর্মসূচি বলে। গাফিলতি দিতে থাকে। তাই তাদের বেতন ভাতাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে পারলে কর্মসূচির পক্ষে ভাল ।
১১. সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন : শহর সমাজসেবা কর্মসূচির বিভিন্ন কার্যাবলিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় সাধনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যা এক প্রকার সমস্যা। তাই এর সমস্ত কার্যাবলি ও অন্যান্য বেসরকারি কর্মসূচির সাথে সেগুলোর সমন্বয় সাধনই শহর সমাজসেবা কর্মসূচিকে জোরদার করতে সহায়তা করে।
১২. স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার ঃ সম্পদের সদ্ব্যবহারই যে-কোনো সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে পারে। শহরাঞ্চলের বিদ্যমান সম্পদগুলো যদি সর্বোত্তম ব্যবহার পদক্ষেপ গৃহীত হয় তাহলে দ্রুত ঐ এলাকার জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে।
১৩. জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ঃ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে-কোনো কর্মসূচি
সফল হতে পারে। শহরাঞ্চলের মানুষ প্রায় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে সচেষ্ট না। যা শহর সমাজসেবা কর্মসূচিতে পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই, শহরের সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে তবেই শহরসমাজসেবা কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, শহরের স্বল্প মজুরি মানুষের জীবন মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শহর সমাজসেবা কর্মসূচি বাংলাদেশের শহরগুলোতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে জনগণের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত
করছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক, পরিকল্পনা গ্রহণ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কর্মসূচি পরিচালিত হলেই শহরাঞ্চলের আমূল উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।