বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের পন্থাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে কী কী উপায়ে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা যায় তা বর্ণনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : মানুষ সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব। তাই জীবনধারণ, বয়স বৃদ্ধি ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য মানুষকে নানারকম চাহিদা পূরণ করতে হয়। তবে যেসব চাহিদা মানুষ পূরণ না করলে মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারে না তাকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে। অন্যদিকে মৌলিক বা মানিবক চাহিদা হল রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদেয় অধিকার বা চাহিদা।বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা এত প্রকট যে এদেশের মানুষ মৌল মানবিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না। তবে উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণসহ কতিপয় পদ্ধতির মাধ্যমে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের উপায় : বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছে না। তাই নিম্নোক্ত উপায়ে বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। নিম্নে বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের উপায় কি কি তার আলোচনা করা হল :
১. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু এদেশের কৃষিব্যবস্থা উন্নত নয়। অনুন্নত চাষ পদ্ধতি,সেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, উন্নত বীজের অভাব ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন ঠিকমতো হয় না। কৃষির আধুনিকায়ন করে উৎপাদন বাড়াতে পারলে মানুষের আয় বাড়বে। আর আয় বাড়লে মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হবে।
২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : অতিরিক্ত জনসংখ্যা বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃ মিঃ। কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। প্রতি বর্গ কিঃ মিঃ এ বাস করে ১২৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৮%। বিপুল এ জনসংখ্যার সব চাহিদা মিটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব।
৩. শিল্পোন্নয়ন : বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর। ফলে অনেককিছু বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। এজন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। যদি শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা যায়, তাহলে উৎপাদন বাড়বে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।ফলে মৌল মানবিক চাহিদা সহজে পূরণ করা যাবে।
৪. কর্মমুখী শিক্ষার সম্প্রসারণ : বাংলাদেশে শিক্ষার হার অনেক কম। তাছাড়া শিক্ষার সাথে কর্মের কোন সম্পর্ক নেই । ফলে শিক্ষা জীবন শেষ করে বেকার জীবন কাটাতে হয়। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মমুখী শিক্ষা চালু করা যায়,তাহলে শিক্ষাজীবন শেষে বসে থাকতে হবে না। ফলে মানুষ বেকার থাকবে না এবং মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
৫. বাসস্থানের চাহিদা পূরণ : বাংলাদেশে বাসস্থান সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। তাছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার দরুন এ সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আড়াই লক্ষ নতুন গৃহের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ গৃহ নির্মাণের প্রয়োজনীয় জমি ও উপাদান পাওয়া যায় না। তাই উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে বাসস্থান সমস্যা সমাধান করে এ চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। সেজন্য জাতীয় গৃহায়ন নীতি প্রণয়ন করা যেতে পারে।
৬. চিত্তবিনোদনের চাহিদা পূরণ : বাংলাদেশে চিত্তবিনোদনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অথচ এটি একটি মৌল মানবিক চাহিদা। তাই চিত্তবিনোদন চাহিদা পরিকল্পিতভাবে পূরণ করা যেতে পারে। সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে চিত্তবিনোদন কেন্দ্র স্থাপন, পরিবার কেন্দ্রিক চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, শহর এলাকায় পার্ক স্থাপন ইত্যাদি করা যেতে পারে।
৭. সম্পদের সুষম বণ্টন : বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের অন্যতম অন্তরায় হল সম্পদের অসম বণ্টন।বাংলাদেশের সম্পদ সুষমভাবে সকল জনগণের মধ্যে বণ্টন করলে তা উৎপাদন কাজে নিয়োজিত হবে। ফলে জনগণের
আয় বাড়বে। জনগণের আয় বাড়লে মৌল মানবিক চাহিদাও সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে।
৮. পরিকল্পিত কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রণয়ন : বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি ও নীতিমালা নেই। যার জন্য বাংলাদেশে সঠিকভাবে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মৌল মানবিক
চাহিদা পূরণের জন্য যুগোপযোগী, সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা যেতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মৌল মানবিক চাহিদা ও মানবিক চাহিদার মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। আর উপরিউক্ত নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব। তবে জনগণকেও তাদের ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। তা না হলে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না।