অথবা, বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকারের ভবিষৎ আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা : স্বাধীনতা লাভের পর পরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হতে না হতেই ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। ফলে বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সুঠুবিকাশ বিঘ্নিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের
সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯১ সাল থেকে পুনরায় এদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার তথা সংসদীয় সরকার প্রবর্তিত হয়েছে। তবে আজো বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পূর্ণাঙ্গভাবে সফলতা অর্জনের জন্য এর বিভিন্ন সমস্যার সঠিক এবং স্থায়ী সমাধান একান্ত দরকার।
বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকারের সম্ভাবনা : বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার প্রবর্তিত হয়েছে জনগণের ইচ্ছায়, তাদেরই আন্দোলনের ফলস্বরূপ। অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের বড় গুণ হলো এতে বহু লোকের অংশীদারিত্বে নিশ্চিত হয়। সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না। বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হলেও ভবিষ্যতে এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। নিম্নে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারের সম্ভাবনাসমূহ আলোকপাত করা হলো :
প্রথমত, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর ও প্রয়োজনীয়। এ ব্যবস্থায় সরকারের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সাথে যেভাবে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলছে তাতে এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রই একমাত্র সফলতা বয়ে আনতে পারবে। অতএব এদিক থেকে এদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। দ্বিতীয়ত, বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত রয়েছে। আর এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুসুলভ এবং তাদের নিকট থেকে বাংলাদেশ প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তাই এদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাও কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তৃতীয়ত, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে একটি নমনীয় সরকার ব্যবস্থা। তাই জনগণ তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন সময় প্রয়োজন অনুপাতে সরকারের পতন ঘটাতে পারে। আবার জনগণ সরকারের স্থায়িত্বও দান করতে পারে। তাই বাংলাদেশের জন্য জনগণ বিশ্বের সাথে সংগতি রেখে চলার জন্য সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। চতুর্থত, সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলকথা হচ্ছে, নির্বাহী কর্মকাণ্ডে মন্ত্রিসভার সম্পূর্ণ দায়িত্ব এবং এর জন্য সংসদের নিকট জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা। মন্ত্রিসভা পরিবর্তন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, যুদ্ধ ঘোষণার সকল দায়িত্ব সংসদের উপর ন্যস্ত। তাই এসবকিছু পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বর্তমানে তেমন কার্যকরী না হলেও এর ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার যে ধারা চালু রয়েছে তা নিঃসন্দেহে গৌরবের দাবিদার। কেননা এটি একটি দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা। তবে সংসদীয় সরকারকে জনগণের সামনে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে এর সমস্যাসমূহ দূর করতে হবে। তবেই বাংলাদেশে এ সরকার ব্যবস্থার সফলতা আসবে। এ সমস্যাসমূহ যত তাড়াতাড়ি দূর করা যাবে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভীত ততই মজবুত হবে।