বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যাগুলো আলোচনা কর।

অথবা, প্রবীণদের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, আমাদের দেশে প্রবীণদের সমস্যাগুলো কী কী?
অথবা, বাংলাদেশে প্রবীণদের প্রধান সমস্যাগুলো কী কী?
অথবা, সংক্ষেপে বাংলাদেশের প্রবীণদের সমস্যাগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। এদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবীণ। অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মত বাংলাদেশে প্রবীণ সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যাও অত্যন্ত প্রকট। দীর্ঘ কর্মময় জীবন শেষে যখন একজন ব্যক্তি জীবনের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেন তখন তিনি নানা সমস্যায় ভোগেন। অথচ আমরা তাদের দিকে নজর দেই না। কিন্তু আমরা যে সমাজে বাস করি সে সমাজ গঠনে এদের অশেষ অবদান রয়েছে। তাই সমাজের সার্বিক মঙ্গলের জন্য প্রবীণদের সমস্যা সমাধান করা জরুরি।
বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা : বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর। তাই ৬০ বছরের ঊর্ধ্বের লোকদেরকেই প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬.১%। নিম্নে প্রবীণদের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা আলোচনা করা হল :
১. কর্মসংস্থানের অভাব : বাংলাদেশে প্রবীণদের প্রধান সামাজিক সমস্যা হল কর্মসংস্থানের অভাব। কর্মসংস্থানের অভাবে তাদের আয় বঞ্চিত। ফলে পারিবারিকভাবে তারা অবহেলার শিকার হন। যারা চাকরিজীবী তারা ৬০ বছরের আগেই অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর পেনশনের টাকা পান খুব কম। তাছাড়া যারা চাকরি করেন না, দরিদ্র অসচ্ছল তাদের অবস্থা আরও করুণ। এ ধরনের প্রবীণরা পারিবারিকভাবে মারাত্মক অবহেলার শিকার। অনেক প্রবীণ আছেন যারা ঠিকমতো খেতে পারেন না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তিকে গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে সরকারিভাবে এসব প্রবীণদের জন্য কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। ফলে এদেশে প্রবীণদের দেখার মত কেউ নেই।
২. স্বাস্থ্যহীনতা : বাংলাদেশে প্রবীণদের অন্যতম সামাজিক সমস্যা স্বাস্থ্যহীনতা। এদেশের অধিকাংশ লোক ৪০ বছরের পর নানারকম স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ সময় ডায়াবেটিকস, হার্টের সমস্যা, চোখের সমস্যা ইত্যাদি মারাত্মক আকার ধারণ করে। অর্থাভাবে তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসা নিতে পারেন না।
৩. পুষ্টিহীনতা : পুষ্টিহীনতা প্রবীণদের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। প্রবীণ বয়সে স্বাভাবিক খাবার তারা খেতে পারেন না। তাদের জন্য পুষ্টিকর ও বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে তারা তার সংস্থান করতে পারে না।
৪. পারিবারিক অবহেলা : যে মানুষ সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের ভরণপোষণ করে, সে যখন বৃদ্ধ হয় তখন পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এসব প্রবীণদের সাথে পরিবারের সদস্যরা খারাপ ব্যবহার করে। রোগ হলে ঠিকমতো সেবা করে না । অনেকে প্রবীণদের মারধরও করে থাকে।
৫. সামাজিক অবহেলা : প্রবীণদের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হল সামাজিক অবহেলা।পারিবারিকভাবে প্রবীণরা যেমন অবহেলার শিকার হন তেমনি সামাজিকভাবেও এদের ছোট করে দেখা হয়।সামাজিক অবহেলার কারণে প্রবীণরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
৬. রাষ্ট্রীয় অবহেলা : বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৬.১ ভাগ প্রবীণ। এসব প্রবীণরা নানারকম সামাজিক সমস্যার শিকার। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রবীণদের সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।বর্তমানে বৃদ্ধভাতা ও বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে তার পরিমাণ ও সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
৭. বিনোদনের অভাব : বিনোদনের অভাব বাংলাদেশে প্রবীণদের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। শহর এলাকায় দু’একটি পার্ক থাকলেও তা প্রবীণদের যাওয়ার অনুপযোগী। তাছাড়া রেডিও টেলিভিশনে প্রবীণদের উপযোগী কোন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় না। এছাড়াও পারিবারিক বিনোদনে প্রবীণদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবীণ হওয়া সত্ত্বেও প্রবীণদের কল্যাণের দিকটি সমাজে অনুপস্থিত। ফলে প্রবীণরা নানারকম সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদেরও উক্ত অবস্থায় পতিত হতে হবে। তাই প্রবীণদের এ সমস্যার আশু সমাধান হওয়া একান্ত জরুরি।