বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত আবশ্যক ” তুমি কি এ উক্তির সাথে একমত ?

[ad_1]

✍️বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত আবশ্যক ” তুমি কি এ উক্তির সাথে একমত ?

উত্তর ৷ ভূমিকা : কোন দেশের শিল্পখাতের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমকে সরকারি নীতিমালা বলে । সরকারের শিল্পনীতিতে শিল্পখাতে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার ধরন ও সীমারেখা , শিল্পোন্নয়নের কৌশল , শিল্প সংরক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকে । তদুপরি দেশের দ্রুত শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত শিল্পনীতিতে তারও দিকনির্দেশনা থাকে ।

বাংলাদেশের শিল্প বেসরকারিকরণ নীতির যৌক্তিকতা : বাংলাদেশের বেসরকারিকরণ নীতির পক্ষে প্রধান যুক্তিগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো :

১. রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অব্যাহত লোকসান : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতের অব্যাহত লোকসান বিরাষ্ট্রীয়করণের পক্ষে প্রধান যুক্তি । ১৯৭২ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৪৭,৭৫৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে এবং ক্রমগত লোকসান দেয়ার ফলে এদের অধিকাংশই বর্তমানে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে । সম্প্রতি প্রতি বছর সরকারকে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭ কোটি টাকা লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে । অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগকে শিল্পোন্নয়ন মনে করা হয় ।

২. ব্যাংকিং খাতের উপর প্রভাব : সরকারি খাতের লোকসান ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করে দেয় । সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের যোগান দেয়া হয় । এতে করে সরকারি ব্যাংকের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে ।

৩. বেসরকারি খাতের উন্নয়ন : বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে বেসরকারি খাতের ভূমিকাকে কোনভাবে খাটো করে দেখা চলে না । তাই শিল্পের বিরাষ্ট্রীয়করণ বা সরকারের পুঁজি প্রত্যাহার নীতি দেশে একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাতের বিকাশ সাধনায় সহায়ক হবে । এর ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ দেশে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হবে ।

৪. উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত দক্ষতা : ব্যক্তি উদ্যোক্তার যে উদ্যোগে নিপুণতা ও গতিশীলতা থাকে তা একজন সরকারি আমলার ক্ষেত্রে সাধারণত আশা করা যায় না । কারণ সরকারি লাভলোকসান তার ব্যক্তি দক্ষত কে প্রভাবিত করে না । তাই বেসরকারিকরণের দ্বারা দেশে শিল্পোন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায় ।

৫. পর্যাপ্ত পুঁজির সংস্থান : কোন দেশের দ্রুত শিল্পোন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের যোগান দেয়া প্রয়োজন । বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পোন্নত দেশে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পুঁজির সংস্থান করা খুবই দুঃসাধ্য । তাই বেসরকারিকরণের ফলে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতি দেশি ও বিদেশি বেসরগরি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে । এর ফলে দেশে দ্রুত শিল্পায়ন হবে ।

৬. দক্ষতা বৃদ্ধি : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহের অভিমত থেকে দেখা যায় যে , ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতাই এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লোকসানের মূল কারণ । বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ সাধারণত নিজেদের মুনাফ বৃদ্ধির তাগিদেই উৎপাদন দক্ষতা অর্জন ও বজায় রাখার চেষ্টা করে । তাই বলা যায় যে , বাংলাদেশে বিরাষ্ট্রীয়কৃত শিল্প মূহের দক্ষতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।

৭. প্রয়োজনাতিরিক্ত জনবল : বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতার ও লোকসানের অন্যতম প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত জনবল । এতে অযথা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে , বেসরকারি খাতে অনেক কম জনবল দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় । তাই বলা যায় যে , সরকারি খাতের তুলনায় বেসরকারি খাত অধিকতর দক্ষ ।

৮. বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহ প্রদান : বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পোন্নয়নের জন্য বিদেশি পুঁজির উৎসাহিত করা প্রয়োজন । বেসরকারিকরণ নীতির ফলে বাংলাদেশ বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে ।

১. দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন : স্বাধীনতার পরে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয় । কিন্তু যে কোন কারণেই হোক আমাদের রাষ্ট্রয়ত্ত শিল্প সে উদ্দেশ্য পালনে ব্যর্থ হচ্ছে । রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের লোকসান করণে বরং আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে । ফলে এদেরকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়াই অধিকতর যুক্তিযুক্ত ।

১০. সমাজ দর্শন : বাংলাদেশের কোন সময়ই সমাজতন্ত্রের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয় নি বরং এদেশে নব্বই এর দশকের প্রথম দিকে সকল বড় রাজনৈতিক দল মুক্ত বাজার অর্থনীতির ম্যানিফেস্টো ঘোষণা করেছে । অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সংকোচন এবং বেসরকারিকরণ এদেশের সমাজ দর্শনের সাথে সংগতিপূর্ণ ।

১১. মুক্ত বাজার অর্থনীতি : বর্তমান যুগ হলো বিশ্বায়নের যুগ । বিশ্বায়নের ধারাবাহিকতার বিশ্ব মুক্ত বাজার অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে । আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয় । তাই দেশের বেসরকারি খাতে উৎসাহ প্রদান লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করা বাঞ্ছনীয় । এতে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের লোকসান প্রতিরোধে বেসরকারিকরণ প্রয়োজন ।

[ad_2]