বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতির গুরুত্ব বা তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধর।

উত্তর : ভূমিকা ঃ জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। অন্যদিকে, সংবিধানের একটি মৌলিক অধিকার হলো স্বাস্থ্য, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণীত হয়েছে। এদেশের জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে জনসংখ্যানীতির গুরুত্ব অপরিসীম। জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়নের ফলেই এদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
→ বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতির গুরুত্ব ঃ নিচে বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা নীতির গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করা হলো :
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ঃ বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা পূর্বের তুলনার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১০ অনুযায়ী এদেশে বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩২। এ ছাড়াও মহিলা প্রাপ্ত উর্বরতা হার ২.৩। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জনসংখ্যা নীতির গুরুত্ব অত্যাধিক।
২. স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ঃ এ দেশে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পূর্বের তুলনার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, স্থূল জন্মহার (প্রতি ১০০০ জনে) ২০.৯ স্থূল মৃত্যুহার (প্রতি ১০০০ জনে) ৬.৩ স্বাস্থ্য
সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনসংখ্যা নীতির কারণে উন্নয়নে ঘটছে।
৩. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ঃ এ দেশের জনসংখ্যা নীতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আর্থিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস ঃ জাতীয় জনসংখ্যা নীতির অন্যতম দিক হলো দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠার নিয়ে আসা, দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যায় সাথে জনসংখ্যা নীতির সমন্বয় ঘটিয়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বিস্তৃতি লাভ করে ।
৫. টেকসই উন্নয়ন সাধন : জাতীয় জনসংখ্যা নীতির আরেকটি অন্যতম দিক হলো শিশু, মহিলা, বয়স্ক প্রভৃতি শ্রেণির স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার টেকসই উন্নয়ন সাধন করা।
৬. শিশুমৃত্যুর হার কমানো ঃ জাতীয় জনসংখ্যা নীতির ফলে দেশে শিশুমৃত্যুর হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯৩ সালে ৮৭,২০০৪ সালে ৬৫ এবং ২০১০ সালে তা কমে ৪১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
৭. শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা ঃ এ দেশের শিশুরা সাংবিধানিক দিক থেকেই স্বাস্থ্য পরিচর্যা পাওয়ায় অধিকার রাখে। জনসংখ্যা নীতিতে শিশুর স্বাস্থ্য সুবিধা ও পরিচর্যার দিকটি সুষ্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ফলে শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষার এ নীতির তাৎপর্য অত্যধিক।
৮. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা ঃ জনসংখ্যা নীতির তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণে সেবা প্রদান করা। জনসংখ্যা নীতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবার কথা উল্লেখ থাকায় দেশের আপামর জনগণ এ সুযোগ ভোগ করবে।
৯. প্রজনন স্বাস্থ্য : দেশের প্রজনন স্বাস্থ্যকে জনসংখ্যা নীতির আওতায় আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে সুস্থতাসহ যৌন জীবনের সার্বিক সক্ষমতাকে বুঝিয়ে থাকে। জাতীয় জনসংখ্যা নীতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য সুবিধা অন্ত র্ভুক্ত থাকায় জনগণের সুস্থতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়ক।
১০. জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান : এদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান জাতীয় জনসংখ্যা নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও এর সাফল্য জাতীয় নীতির জন্যই সম্ভব হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং এর উন্নয়নে জনসংখ্যা নীতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মানব সম্পদ ের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, জনসংখ্যার বিকাশ, পরিবার কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ নীতির গুরুত্ব অত্যধিক।