বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো বর্ণনা কর

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের তোমার সুপারিশসমূহ লিখ।

অথবা, বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো বর্ণনা কর।
অথবা, তোমার মতে কী কী উপায়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বর্ণনা কর।
অথবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তুমি কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দিবে?
ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ রাষ্ট্রের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা সমস্যা অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশে এ সমস্যা প্রকট এবং দিনদিন আরও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এটি শুধু একক কোন সমস্যা নয়, বরং এ সমস্যা সমাজে আরও অনেকগুলো সমস্যার জন্ম দেয়। ১৯৭৬ সাল থেকে এটি বাংলাদেশের জন্য এক নম্বর সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ : জনসংখ্যা সমস্যা বর্তমান বাংলাদেশে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ সমস্যা যদি দ্রুত সমাধান করা না যায়, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাবে এতে কোন
সন্দেহ নেই। নিম্নে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সুপারিশসমূহ আলোচনা করা হল :

১. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ : অধিক জনসংখ্যার জন্য কম বয়সে বিবাহ এবং এক ব্যক্তির অধিক স্ত্রী গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ আইনকে আরও কার্যকরী করতে হবে।

২. শিক্ষার প্রসার : নারী পুরুষ নির্বিশেষে জনগণের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। জনগণ শিক্ষিত হলেই সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের জীবনকে পরিকল্পিতভাবে গঠনের চেষ্টা করে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা গেলেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে নিম্নমুখী করা যাবে।

৩. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলে জন্মহার হ্রাস পায়। সাধারণত গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোতেই অধিক সন্তান লক্ষ্য করা যায়, যাদের জীবনমান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে। তাই জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. নারীর ক্ষমতায়ন : পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নারীদেরকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর মতামতের মূল্য দিতে হবে। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, নারীরাও পুরুষের সমান মতামত প্রদানের অধিকারী।

৫. পরিবার পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করা : জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনাকে আরও অধিক কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধিক সন্তানের সুফল কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে আরও বেশি বেশি সচেতন করতে হবে।

৬. ধর্মীয় কুসংস্কার রোধ : আমাদের দেশের বেশিরভাগ জনগণ ধর্মীয় কুসংস্কারে নিমজ্জিত। তাদের অনেকেরই মনে একটি ধারণা বিদ্যমান তা হচ্ছে, মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি। জন্মরোধ করা অন্যায়। এ মনোবৃত্তির জনগণকে সঠিক বিষয়টা বুঝাতে হবে।

৭. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়। বেকারসমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। এতে দরিদ্রতা দূরীভূত হবে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

৮. বাস্তবমুখী জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন : সুনির্দিষ্ট নীতি ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা জন্মহার হ্রাসের অন্যতম
পূর্বশর্ত। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে সৃষ্ট সমস্যার উপর গবেষণার আলোকে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও বাস্তবায়নযোগ্য
জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা আবশ্যক।


উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে যেমন অনেকগুলো কারণ ক্রিয়াশীল, তেমনি এ সমস্যা রোধ করার জন্যও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই এ ব্যাপারে সরকার এবং সচেতন মহলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। জনসংখ্যার এ ঊর্ধ্বগতিকে যদি যথাশীঘ্র নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে এ অধিক জনসংখ্যা সম্পদে পরিণত হওয়া তো দূরের কথা, বরং দেশ ও জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হয়ে পড়বে অস্থিতিশীল ।