বাংলাদেশে উচ্চ প্রজনন হারের কারণগুলো লিখ।
অথবা, বাংলাদেশে প্রজনন হার বৃদ্ধির কারণসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, কী কী কারণে প্রজনন হার বৃদ্ধি পাচ্ছে?
অথবা, উচ্চ প্রজনন হারের কারণগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি জনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশটির জনসংখ্যা ক্রমাগত হারে বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মৃত্যুহার যে হারে কমছে জন্মহার সে হারে কমেনি। ফলে জনসংখ্যা বিভিন্ন মাত্রায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো উচ্চ প্রজনন হার ।
প্রজনন হার : প্রজনন বা জন্মহার বলতে বুঝায়, একজন মহিলার কতজন সন্তান জন্ম লাভ করবে। প্রকৃতপক্ষে, প্রজনন হার বলতে কোনো নারী বা নারী সমৃষ্টি কর্তৃক প্রকৃত সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বা হার ।
প্রজনন হারের কারণ : বাংলাদেশে উচ্চ প্রজনন হারের কারণগুলো নিম্নে দেয়া হলো :
১. অল্প বয়সে বিবাহ : বাংলাদেশে উচ্চ জন্মহারের অন্যতম প্রধান কারণ অতি অল্প বয়সে নারী-পুরুষের বিবাহ। অধিক বয়সে বিয়ে অর্থাৎ দেরিতে বিবাহ হলে সন্তান সংখ্যা কম হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মহিলাদের ১৪-১৮ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হয়। ফলে প্রজনন হার বেশি হয়।২. ধর্মীয় প্রভাব : ধর্মীয় মূল্যবোধ চেতনায় বিশ্বাসী লোক মনে করেন, সন্তান দিবেন যিনি রিজিক দিবেন তিনি। তাই তারা ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একের পর এক অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় চেতনার প্রভাবে প্রজনন হার দিন দিন বাড়ছে।
৩. নিম্নমানের জীবনযাপন : নিম্নমানের জীবনযাপন অধিক প্রজনন হারে কম দায়ী নয়। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে জীবনযাপন করে। এ দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জীবন সম্বন্ধে উদাসীন। এজন্য দেখা যায় যে, যাদের সন্তান লালনপালন করার ক্ষমতা নেই তাদের ক্ষেত্রেই সন্তান সংখ্যা বেশি।
৪. চিত্তবিনোদনের অভাব : বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর চিত্তবিনোদনের অভাব নিত্যদিনের। তারা উপযুক্ত এবং সুস্থ চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চিত্তবিনোদনের অভাবে তাঁরা স্ত্রীকে চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। এর ফলে বাংলাদেশে প্রজনন হার বেশি।
৫. নারী শিক্ষার অভাব : বাংলাদেশের সমাজের প্রেক্ষাপটে অধিক প্রজনন হারের আরেকটি কারণ হলো নারী শিক্ষার অভাব। একজন শিক্ষিত মা সব সময় কম সন্তান নিতে আগ্রহী থাকে বলে সন্তান সংখ্যা কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে প্রজনন হার অধিক।
৬. আমিষ জাতীয় খাদ্যের পর্যাপ্ততা : বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মানুষ প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ আমিষযুক্ত খাবার খেতে অধিক পছন্দ করে যা প্রজনন হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছ, ভাত, শাক সবজি, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার প্রজনন শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
৭. উচ্চ মৃত্যুহার : আমাদের দেশে বিভিন্ন উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে জন্মহার যে হারে কমেছে মৃত্যুহার সে হারে কমেনি। ফলে উচ্চ মৃত্যুহারের কারণে প্রজনন হার বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে।
৮. সামাজিক সচেতনতার অভাব : সামাজিক সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের মানুষ অধিক হারে সন্তান জন্ম
দিয়ে থাকে। আমাদের দেশের মানুষ অধিক সন্তানের কুফল সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে তারা একের পর এক সন্তান জন্ম দিতে দ্বিধাবোধ করে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজ প্রেক্ষাপটে উচ্চ জন্মহারের পিছনে একক কোনো কারণ দায়ী নয়, বরং এর পটভূমিতে বিভিন্নমুখী কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। ধর্মীয় গোঁড়ামি, আর্থিক সংকট, অশিক্ষা, ‘বাল্যবিবাহ, নারী শিক্ষা ইত্যাদি কারণে জন্মহার উচ্চ হারে বেড়ে চলেছে।