বাংলাদেশের যুবকের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের যুবকদের সমস্যাগুলো কী কী?
অথবা, আমাদের দেশের যুবকরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয় তা বর্ণনা কর।
অথবা, সংক্ষেপে যুবকদের সমস্যাবলি বর্ণনা কর।
অথবা, আমাদের দেশে যুবকদের সমস্যাবলি কী কী তোমার নিজের ভাষায় লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : যুবক সম্প্রদায় হল একটি দেশ ও জাতির সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। একটি দেশের যুব সম্প্রদায় যতবেশি যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষিত ঐ দেশ ততবেশি উন্নত। যুবক বলতে একটা দেশের সম্ভাবনাময় ও উৎপাদনশীল জনগণকেই বুঝায়। বাংলাদেশে বর্তমানে সোয়া চার কোটি যুবক রয়েছে। যার অনুপাত ৩০.৩৬%। বিভিন্ন দেশে যুবকদের বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের যুবকদের সমস্যা :
১. দারিদ্র্য : বাংলাদেশের যুবকদের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হল দারিদ্র্য। দারিদ্র্য হল এমন একটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক অবস্থা যে অবস্থায় একজন মানুষ/ব্যক্তির আয় অত্যন্ত কম থাকে। ফলে সে তার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সমর্থ হয় না। যেমন- জাতিসংঘের মতে, ঐ ব্যক্তি হল দরিদ্র যার দৈনিক আয় ১ ডলারের কম। ২০০০ সাল নাগাদ আমাদের দেশে চরম দারিদ্র্য ১৯.৯৮% এবং অনপেক্ষ দারিদ্র্য ৪৪.৩০%।
২. বেকারত্ব : যুবকদের কর্মসংস্থান লাভের চাহিদা পূরণ না হওয়ার ফলে বেকারত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব হল ব্যক্তির এমন একটি অবস্থা যে অবস্থায় ব্যক্তি কাজ করতে সক্ষম থাকে অথচ কাজ পায় না। পরিসংখ্যানে দেখা যায় আমাদের দেশে প্রায় ১ কোটি যুবক বেকার। তাই বলা যায়, আমাদের দেশে বেকারত্ব যুবকদের অন্যতম প্রধান সমস্যা।
৩. নিরক্ষরতা : সকল শ্রেণীর যুবকদের জন্য নিরক্ষরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সাধারণত নিরক্ষরতা বলতে বুঝায় অক্ষরজ্ঞানহীন অবস্থা। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি নিরক্ষর যে কোন ভাষায় চিঠি
লিখতে ও পড়তে অক্ষম। আমাদের মোট জনসাধারণের ৬২.৬৬% শিক্ষিত (সমীক্ষা-২০০৩)। সুতরাং দেখা যায় আমাদের যুব সমাজের একটা অংশ বর্তমানে নিরক্ষর, যা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য সমস্যা।
৪. স্বাস্থ্যহীনতা : রোগমুক্ত সুস্থ শরীরকেই বলা হয় স্বাস্থ্য। আমাদের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাস্থ্যহীনতা তথা সুস্বাস্থ্যের অভাব অনেক বেশি। বিশেষ করে অশিক্ষিত ও দরিদ্রদের জন্য এটি একটি প্রধান সমস্যা। তারা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়া এবং পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্যহীনতা সমস্যায় তারা আক্রান্ত হচ্ছে।
৫. মূল্যবোধের অবক্ষয় : মূল্যবোধ হল কতকগুলো রীতিনীতি, প্রথা প্রতিষ্ঠান, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং ঐ বিশ্বাস আমাদের আচরণ দ্বারা প্রকাশ করা। প্রত্যেক সমাজে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এ ধরনের মূল্যবোধের অধিকারী/বিশ্বাসী। কিন্তু আমাদের যুবক সমাজের মধ্যে চাহিদার অপূরণজনিত কারণে আজ তাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে । বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতাদর্শই এজন্য দায়ী।
৬. রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার : আমাদের দেশে যুবক সমাজকে নেতিবাচক রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা খুব বেশি এবং রাজনৈতিক স্বার্থে রাজনেতিক দলগুলো যুবকদের ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ! যেমন- বন্ধুক, পিস্তল, বোমা ইত্যাদি। তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষ, মারামারি, ধর্মঘট, হরতাল ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদন করা হচ্ছে। তাদেরকে ধূমপান ও মাদকাসক্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশে বিদ্যমান আদর্শহীন রাজনীতি। তাই আজকের যুব সমাজ তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারের দিকে অধিক মনযোগী হয়ে পড়ছে।
৭. সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব : বিনোদন মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্বস্তি এনে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের যুবকরা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হলে তারা একদিক থেকে যেমন অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে পারে অন্যদিকে তেমনি নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। এজন্য তাদের দরকার বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক বিনোদন কার্যক্রম, যেমন- খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট সুযোগ থাকা । এজন্য স্থানীয় ও জাতীয় উদ্দেশ্য একান্ত জরুরি, যা আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যুবকরা হল দেশ ও জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। যুব সমাজের শক্তি সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি। এরা জাতির উন্নয়নের হাতিয়ার, জাতির বিপদের কান্ডারী, জাতির অন্ধকারে আশার প্রদীপ হয়ে কাজ করে।