অথবা, বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলির বিবরণ দাও।
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। সুতরাং উন্নয়নশীল দেশের সকল সমস্যাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কমবেশি বিদ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি : নিম্নে বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. শিল্পের সমস্যা : ব্রিটিশ আমলে এদেশে শিল্পোন্নতি হয়নি। পাকিস্তান আমলেও এখানে শিল্পোন্নয়নের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। স্বাধীনতার পরও আমাদের অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। দেশে তেমনভাবে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি।
২. অনুন্নত অর্থনৈতিক কাঠামো : আমাদের দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই দুর্বল। বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা এখনো উন্নত হয়নি। এটি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩. জনসংখ্যার বিস্ফোরণ : বাংলাদেশে জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-২০১০ সালে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমান বছরে শতকরা ১.৩২ ভাগ হারে জনসংখ্যাবৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যাবৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টাই বানচাল হয়ে যাবে।
মুদ্রাস্ফীতির চাপ : ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা। দেশের ও শিল্প উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। অন্যদিকে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটের অর্থায়ন করা হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. শিক্ষার অভাব : শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। কিন্তু দেশের জনগণের অধিকাংশই অশিক্ষিত। এদেশে ১৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিক্ষার হার শতকরা ৫৪ ভাগ মাত্র। শিক্ষার অভাব আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়।
৬. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার : বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। অবশ্য যা কিছু আছে তাও মূলধন, কুশলী, শ্রমিক ও সংগঠনের অভাবে ঠিকমতো কাজে লাগান যাচ্ছে না। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। যা
৭. বেকার সমস্যা : জনসংখ্যাবৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কর্মপ্রার্থী শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান না বাড়ায় আমাদের দেশে বেকার সমস্যার তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
৮. সংগঠকের অভাব : আমাদের দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে ঝুঁকি বহন করার মতো সংগঠকের একান্ত অভাব রয়েছে। ব্যবসায় অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা পুঁজি বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণ করতে চায় না। এটি আমাদের শিল্প বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায়।
৯. খাদ্যঘাটতি : কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। ফলে প্রতি বছর আমাদেরকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর গড়পড়তায় প্রায় ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি থাকে। তবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য দেশে ব্যাপক উদ্যোগ চলছে।
১০. কৃষি সমস্যা : বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এদেশের শতকরা প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করে। কিন্তু আমাদের কৃষি ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। এদেশে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে
চাষাবাদ করা হয়।
১১. প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য : বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন। রপ্তানি বাণিজ্যে আমরা গুটি কয়েক কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের উপর নির্ভর করি। কিন্তু রপ্তানির তুলনায় আমাদের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি।
১২. কুশলী শ্রমিকের অভাব : আ
মাদের দেশে শিক্ষিত প্রশিক্ষণের অভাবে কর্মকুশলতা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে প্রচুর শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আমদানি করতে হয়। এতে আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
১৩. মূলধনের অভাব : বাংলাদেশে মূলধন গঠনের হার খুবই কম। ফলে মূলধনের অভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এবং বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৪. সম্পদের অসমবণ্টন : বাংলাদেশের আয় ও সম্পদের বণ্টন সুষম নয়। এদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের ধনী ক্রমশ আরো ধনী ও দরিদ্র ক্রমশ আরো দরিদ্র হচ্ছে।
১৫. স্বল্প মাথাপিছু আয় : বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ৭৫০ মার্কিন ডলার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু আয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। জনগণের মাথাপিছু আয় কম বলে আমাদের সঞ্চয়ের হারও খুবই কম। এতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত হচ্ছে।
উপসংহার : আলোচনা থেকে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদেরকে এ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে।