[ad_1]
👉বাংলাদেশের মূলধন বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মূলধন বাজারের বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে । মূলধন বাজারের সংজ্ঞা পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশে মূলধন বাজারের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায় :
১. প্রধান ব্যবহারকারী : মূলধন বা পুঁজি বাজারের প্রধান ব্যবহারকারী হলো ব্যক্তিবর্গ , করপোরেশন , স্থানীয়ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিদেশি ঋণ গ্রহণকারিগণ ।
২. দলিলপত্র বা চুক্তির প্রকারভেদ : যেসব দলিলপত্রের মাধ্যমে মূলধন বাজারে তহবিল সরবরাহ করা হয় এবং সংগৃহীত হয় সেগুলো প্রধানত দুই প্রকার । যথা :
ক . ঋণের দলিলপত্র : ব্যক্তিগত বা বিধিবদ্ধ পত্র , বিধিবদ্ধ বন্ড , সরকারি বিভিন্ন পত্র ও বন্ড ।
খ . ইক্যুইটি দলিলপত্র : নতুন মূলধন সংগ্রহের জন্য যৌথ মূলধনী কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত শেয়ার স্টক ইত্যাদি ।
৩. দলিলপত্রসমূহের মেয়াদ পূর্তি : সাধারণভাবে যদিও বলা হয় যে , যেসব ঋণের দলিল এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় সেগুলো মুদ্রা বাজারে এবং মাধ্যমিক মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দলিল মূলধন বাজারে ব্যবহৃত হয় । কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে উভয় বাজারের মধ্যে তথা সেগুলোর দলিলপত্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা সম্ভবপর হয় না ।
৪. কেন্দ্রীয়করণের মাত্রা : ব্যাপক অর্থে মূলধন বাজারের ক্ষেত্র বিশাল । সেখানেই ব্যাংক বা বীমা কোম্পানি মেয়াদি ঋণ দেয় অথবা বিধিবদ্ধ বন্ড , সরকারি বন্ড , স্টক ক্রয়বিক্রয় হয় কিংবা যে কোন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অর্থনৈতিক এককসমূহ বন্ধকির বিনিময়ে ঋণ নেয় , সেখানেই মূলধন বাজার বিরাজ করে ।
৫. প্রত্যক্ষ বনাম খোলাবাজার লেনদেন : মূলধন বাজারে সাধারণত দুই ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে । যথা :
ক . প্রত্যক্ষ লেনদেন : যখন কোন আর্থিক মাধ্যমে বিভিন্ন সঞ্চয়কারীর আমানত থেকে স্থানীয় লোকজনকে সরাসরি বন্ধকি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সঞ্চয়কারীদের দ্বারা সঞ্চিত অর্থ বণ্টন করে তখন উক্ত লেনদেনকে প্রত্যক্ষ লেনদেন বলে । সরকার ও বিভিন্ন করপোরেশন কর্তৃক গৃহীত প্রত্যক্ষ ঋণ , কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত শেয়ারের ব্যক্তিগত বিক্রয় ইত্যাদি প্রত্যক্ষ লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত । এসব লেনদেন সাধারণত ব্যাপক এবং বিচ্ছিন্ন বাজারে সংগঠিত হয়ে থাকে ।
খ . খোলাবাজার লেনদেন : শেয়ার , বন্ড , স্টক , বন্ধকি ইত্যাদি যখন খোলাবাজারে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিক্রয় হয় এবং সেগুলো বাজার মূল্য প্রভাবিত হয় তখন তাকে খোলাবাজার লেনদেন বলা হয় । নির্ধারিত মূল্য এবং আয় সম্বলিত কোন বন্ডের জন্য যদি জাতীয়ভাবে আবেদন চাওয়া হয় অথবা কোন ট্রেজারি নিশ্চয়তাপত্র যদি ইস্যু করা হয় তবে এক্ষেত্রে সংগঠিত লেনদেনকে খোলাবাজার লেনদেন বলা যায় ।
৬. প্রাথমিক বনাম মাধ্যমিক লেনদেন : মূলধন বাজারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেনদেন এর পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার কারণে নতুন ইস্যুকৃত স্টক বা বন্ডের কিংবা বন্ধকির মূল্য নির্ধারিত হয় । যে বাজারে প্রাথমিক বা প্রত্যক্ষ লেনদেন হয় তাকে প্রাথমিক মূলধন বাজার এবং যে বাজারে মাধ্যমিক লেনদেন হয় তাকে মাধ্যমিক মূলধন বাজার বলে । প্রাথমিক মূলধন বাজারে বিভিন্ন প্রকার বন্ধকি এবং মাধ্যমিক মূলধন বাজারে শেয়ার , স্টক , বন্ড ইত্যাদি ক্রয়বিক্রয় হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বাংলাদেশের মূলধন বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করছে । যা বাংলাদেশের পক্ষে খুবই কল্যাণ কর ।
👉 বাংলাদেশে মূলধন বাজারের কার্যাবলি আলোচনা কর ।
উত্তর : মূলধন বাজারের কার্যাবলি : বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সংগ্রহে মূলধন বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । একটি সুসংগঠিত বাজারের কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. বিভিন্ন প্রকারের মূলধন সরবরাহ করা মূলধন বাজারের প্রধান কাজ । মূলধন বাজারের তহবিলের সিংহভাগ আসে ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগযোগ্য সঞ্চয় থেকে । এ মূলধন কারবারের স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় কিংবা চলতি মূলধন হিসেবে নিয়োজিত হতে পারে । কারবার প্রবর্তনের স্থায়ী মূলধন , চলতি মূলধন এবং কারবার সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের অর্থের যোগান মূলধন বাজার দিয়ে থাকে ।
২. মূলধন বাজারের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া । এ বাজার প্রত্যক্ষভাবে কোন প্রতিষ্ঠানকে মূলধন প্রদান করে না । শেয়ার ডিবেঞ্চার , সরকারি বন্ড ক্রয়বিক্রয় ও অবলেখনের মাধ্যমে শিল্প বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বিনিয়োগের সুবিধা দিয়ে থাকে ।
৩. মূলধন বাজার শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের কাজও করে থাকে এবং জনসাধারণের মধ্যে সমন্বয়ের স্পৃহাও বৃদ্ধি করে । মূলধন বাজারে দ্বিতীয় অংশ শেয়ার বাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীকে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে পেরেছে । শেয়ার বাজারের ব্যক্তিবর্গের বিনিয়োগ বৃদ্ধি তাদের অধিক সঞ্চয়ের ইঙ্গিত বহন করে ।
৪. মূলধন বাজারে লগ্নি কারবার ট্রাস্ট জনসাধারণের নিকট হতে অর্থসংগ্রহ এবং উক্ত অর্থ বিশেষভাবে নির্বাচিত শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগ করে লগ্নীকৃত মূলধনের উপর যথাসম্ভব বেশি লভ্যাংশ পাওয়ার ব্যবস্থা করে ।
৫. মূলধন বাজারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শেয়ার বিক্রয়ের দায় গ্রহণ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুষমকরণ , আধুনিকীকরণ , সংস্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য অর্থ সাহায্য করে এবং প্রয়োজন হলে বিভিন্ন কারবারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্থাপনা প্রশাসনিক ও কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকে ।
👉 বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধন বাজারের ভূমিকা আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব মূলধন অত্যন্ত অল্প । তাই মূলধন বাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র ইস্যু এবং বিক্রয় করে তাদের মূলধন চাহিদার সিংহভাগ মিটাতে সক্ষম হতে পারে । এজন্য এসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধন বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধন বাজারের ভূমিকা : নিম্নে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধন বাজার কিভাবে সহায়তা করে তা আলোচনা করা হলো :
১. প্রকৃত সম্পদ ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহ মূলধন বাজারের বেশিরভাগ লেনদেন সংরক্ষিত ঋণপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায় । এতৎসত্ত্বেও নতুনভাবে ইস্যুকৃত ঋণপত্রের লেনদেনের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক ঋণপত্র হলে তা নতুন সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি বুঝায় , তাছাড়া উদ্বৃত্ত অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে ঘাটতি অর্থনৈতিক ইউনিটের তহবিল স্থানান্তর নির্দেশ করে থাকে । প্রাথমিক ঋণপত্রের বাজার এভাবে ঋণ দানযোগ্য তহবিলের প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ঋণপত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের বাজার বিরাজমান আর্থিক সম্পদ ও দায়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের পুনর্বণ্টনে সহায়তা করে । এ দুটি উপায়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মূলধন বাজার অর্থনীতির প্রকৃত সম্পদ এবং আয় উন্নীতকরণে সহায়তা করে থাকে ।
২. বিনিয়োগযোগ্য মূলধন গঠনে সহায়তা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মূলধন বাজারের তহবিলের মূল উৎস নিম্নরূপ :
ক . জনসাধারণ , যাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ আছে ।
খ . বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন- বাণিজ্যিক ব্যাংক , বিভিন্ন উন্নয়ন ব্যাংক , পেনশন তহবিল , বিভিন্ন ট্রাস্ট ইত্যাদি । মূলধন বাজারের তহবিলের সিংহভাগ আসে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের বিনিয়োগযোগ্য সঞ্চয় থেকে । যে কোন ব্যক্তি , ব্যাংক অথবা ঋণপত্রের ব্রোকারের মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নতুনভাবে ইস্যুকৃত বিভিন্ন ধরনের শেয়ার ডিবেঞ্চার বা বন্ড ক্রয় করতে পারে । মূলধন বাজারের এরূপ বিনিয়োগের মাধ্যমসমূহ নতুন মূলধনের যোগান বৃদ্ধি করে । অন্যদিকে , বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের সাহায্যে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় একীভূত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে । একত্রিত এ বিপুল সঞ্চয় তারা বিভিন্ন ধরনের শেয়ার , স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্র , বন্ড , ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য বিনিয়োগ করে থাকে । এভাবে মূলধন বাজারের বিভিন্ন হাতিয়ার বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগযোগ্য মূলধন গঠনে সহায়তা করে ।
৩. সম্পদের দক্ষ কটনে সহায়তা : একটি দেশে সম্পদের প্রাচুর্যতা থাকলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় না । এক্ষেত্রে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের উপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটা নির্ভর করে । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহে সম্পদ অপ্রতুল থাকা সত্ত্বেও যদি এসব সম্পদ দক্ষভাবে বিভিন্ন উৎসে বণ্টন করা যায় তাহলে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে । মূলধন বাজার সর্বোচ্চ বিনিয়োগজনিত আয়ের দিকে সঞ্চয়কে প্রবাহিত করে সম্পদের দক্ষ বণ্টনে সহায়তা করে থাকে । তাছাড়া মূলধন বাজার ন্যূনতম ব্যয়ে উদ্বৃত্ত অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে ঘাটতি ইউনিট তহবিল স্থানান্তর করে সম্পদের দক্ষ ব্যবহারে সহযোগিতা করে থাকে । এভাবে একটি গতিশীল মূলধন বাজার বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিলের কাম্য বণ্টনই নিশ্চিত করবে না , পাশাপাশি এটি অর্থনীতিতে অতিরিক্ত সঞ্চয় ও বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সক্ষম ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা একথা বলতে পারি যে , বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের দক্ষ বণ্টন ও ব্যবহার মূলধন বাজার সক্রিয় সহযোগিতা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে । এক্ষেত্রে একটি সুসংগঠিত ও সুসংহত মূলধন বাজার দেশের শিল্পোন্নয়নে এক বিরাট অবদান রাখতে পারে । অতএব বাংলাদেশ একটা উন্নয়নগামী দেশ হিসেবে তার শিল্পোন্নয়নে মূলধন বাজার যদি সুসংগঠিত হয় তবে দেশে শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে ।
[ad_2]