বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের ত্রুটিগুলো কী কী ?

[ad_1]

👉 বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের ত্রুটিগুলো কী কী ?

উত্তর ৷ ভূমিকা : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বীকৃত মাপকাঠি হলো সেদেশের মুদ্রা বাজারের উন্নয়নের মাত্রা । উন্নয়ন ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে মুদ্রা বাজার ও পুঁজি বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশের মুদ্রা বাজার এখনো অনুন্নত পর্যায়ে রয়েছে । অসংখ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ডিলারদের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদের ঋণের ঘনিষ্ঠ লেনদেন ও প্রতিযোগিতার যে চিত্র উন্নত দেশে দেখা যায় , তা বাংলাদেশে অনুপস্থিত । তাছাড়া বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করলে একে মোটেই উন্নত বলা যায় না ।

বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের ত্রুটিসমূহ : দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রা বাজারের গুরুত্ব অপরিসীম । কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রা বাজার উন্নত নয় ।

নিম্নে মুদ্রা বাজারের ত্রুটিসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. সুসংগঠিত ব্যাংক ব্যবস্থার অভাব : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের অন্যতম প্রধান ত্রুটি বা সমস্যা হলো যে , এখানকার ব্যাংক মোটেও সুসংগঠিত নয় । এ দেশে এখনো পর্যাপ্ত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শহরকেন্দ্রিক । গ্রামাঞ্চলে এখনো ব্যাংকিং সুযোগ সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে ।

২. বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল ভূমিকা : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের আরেকটি ত্রুটি হলো মুদ্রা বাজারের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ কর্তৃত্বের অভাব । বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর দেশের মুদ্রা বাজারের নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনার দায়দায়িত্ব অর্পিত । কিন্তু বাংলাদেশের আইনগত অপূর্ণতা , সুষ্ঠু প্রথার অভাব , রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে মুদ্রা বাজারের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই ।

৩. অসংগঠিত বিল বাজার : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের অন্যতম প্রধান ত্রুটি হলো সুসংগঠিত বিল বাজারের অভাব । বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে এখনো ব্যাংকিং অভ্যাস গড়ে উঠে নি । এজন্য বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে হুন্ডি , চেক , ট্রেজারি বিল প্রভৃতির ব্যবহার খুবই কম ।

৪. সরকারি হস্তক্ষেপ : সরকারি হস্তক্ষেপের কারণেও অনেক সময় মুদ্রা বাজারে অসংগতি লক্ষ্য করা যায় । যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক সরকার মালিকানাধীন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সরকার কর্তৃক নিযুক্ত তাই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সুষ্ঠু পরিচালনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে ।

৫. সমন্বয়ের অভাব : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তেমন সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেই । বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা নীতি অনুসরণ করে এবং এদের সুদের হারের ক্ষেত্রেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।

৬. তারল্যের অভাব : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে যথেষ্ট তারল্যের অভাব দেখা যায় । অথচ মুদ্রা বাজার এমন হওয়া উচিত যাতে সহজেই কোন সম্পদকে তারল্যে বা নগদ অর্থে রপ্তানি করা সম্ভব হয় ।

৭. মুদ্রায়তন : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারের আয়তন অনেক ছোট । ফলে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঋণদানকারী সংস্থার অভাবে মুদ্রা বাজার জনসাধারণের প্রয়োজনীয় ঋণের চাহিদা মিটাতে পারে না ।

৮. স্থিতিস্থাপকতার অভাব : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে স্থিতিস্থাপকতার একান্ত অভাব পরিলক্ষিত হয় । উন্নত মুদ্রা বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঋণের যোগান পরিবর্তিত হয় । অথচ বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে স্থিতিস্থাপকতা নেই বললেই চলে ।

৯. পরস্পর পরিপুরক উপবাজারের অভাব : বিল বাজার , তলবি ঋণ বাজার , বন্ড বাজার ইত্যাদি মিলে সুস্থ অর্থ বাজার তৈরি হতে পারে । কিন্তু বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে সুসংগঠিত উপবাজার ও তাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার অভাব রয়েছে ।

উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে , দুর্বলতাসমূহের কারণে বাংলাদেশে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার অতিরিক্ত তহবিল সহজে যে কোন মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে না । উন্নত অর্থ বাজারের সকল সুফল বাংলাদেশে ভোগ করা সম্ভব হয় না ।

👉বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের উন্নয়নের উপায় কী কী ?

উত্তর ৷ ভূমিকা : মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন একটি বাজার অর্থনীতির বিকাশের জন্য অপরিহার্য । মুদ্রা বাজারের সুস্থ কার্যকারিতার উপরই আধুনিক অর্থনীতির জটিল কাঠামো নির্ভরশীল । অতএব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন অত্যাবশ্যক ।

বাংলাদেশে মুদ্রা বাজার উন্নয়নের উপায় : নিম্নে বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের উন্নয়নের উপায় আলোচিত হলো :

১. বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ : দেশের মুদ্রা বাজারের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সুষ্ঠু মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন , আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যথাযথ তত্ত্বাবধানে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন , সর্বোত্তম আস্ত র্জাতিক ব্যাংকিং রীতিনীতি প্রবর্তন ও ব্যাপকভিত্তিক প্রক্রিয়ার অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি দক্ষ , কার্যকর ও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ।

২. কলমানি মার্কেটের প্রসার : কলমানি মার্কেট বলতে বুঝায় সে মার্কেট বা বাজারকে , যেখানে তিন দিন বা তারও কম সময় মেয়াদের জন্য প্রদত্ত ঋণ এবং প্রয়োজনে যে কোন সময় উদ্ধারযোগ্য ঋণ লেনদেন করা হয় । অন্যত্র ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করার সুযোগ প্রদান করা হয় ।

৩. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি : মুদ্রা বাজারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন । গ্রাম প্রধান দেশ হিসেবে আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করে । অতএব গ্রামাঞ্চলে যাতে ব্যাংক ব্যবসায় প্রসারিত হয় , সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর দিতে হবে ।

৪. বিনিময় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রা বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের দেশের বিনিময় ব্যাংকগুলো যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক পরিচালিত হয় এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতিকূলে যাতে কাজ না করতে পারে , সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

৫. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা : মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন সাধন করতে হলে এ বাজারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে । বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাতে সুসংহতভাবে কাজ করে , সেদিকে নজর দিতে হবে ।

৬. ব্যাংক বেসরকারীকরণ : মুদ্রা বাজারের সামগ্রিক উন্নয়নের অপরিহার্য অংশ হিসেবে ব্যাংক বেসরকারীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । সরকারি ব্যাংকগুলোতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন সাধন করা যায় ।

৭. ঋণপত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি : অর্থ বাজারে বর্তমানে প্রধানত ট্রেজারি বিল লেনদেন করা হয় । নির্ভরযোগ্য ঋণপত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি মুদ্রা বাজারের জন্য অত্যাবশ্যক । উন্নত দেশের মতো সোয়াপ , অপশন ইত্যাদি বাংলাদেশ ছাড়তে পারে ।

৮. সেকেন্ডারি বাজারের প্রসার : বিল বা বন্ড প্রাথমিক বাজারে ছাড়ার পর তা সেকেন্ডারি বাজার প্রসার ঘটলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকটের সমাধান হবে এবং তারা অধিক ঝুঁকি গ্রহণ করে ব্যবসায় করতে পারবে ।

৯. ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ : বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে খেলাপি ঋণ একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে । তাই সুস্থ মুদ্রা বাজার গঠন করতে হলে এরূপ ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

উপসংহার : উপর্যুক্তভাবে আমরা বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারকে উন্নয়ন করতে পারবো বলে আশা করা যায় ।

[ad_2]