অথবা, কী কী কারণে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কয়েকটি কারণ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েকটি কারণ সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা ইতিহাসে বিরল। এ মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির শত বছরের আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন চেতনার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এবং এর মাধ্যমে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক মহা ঐক্যের সূচনা ঘটে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণা শক্তি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কারণ : ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক অনন্য সংযোজন। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলেই বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. ভৌগলিক কারণ : পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার ভৌগোলিক ব্যবধান এই দুই অঞ্চলে বৈষম্যের কারণ হয়। ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের নানাভাবে শোষণ করতো।
২. সামাজিক কারণ : দুই প্রান্তের অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। এ সামাজিক কারণ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ভূমিকা রেখেছিল।
৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজমান ছিল। এই অর্থনৈতিক বৈষম্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কারণ।
৪. রাজনৈতিক ক্ষমতা : পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেয়েও শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। এই ঘটনা এদেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
৫. সাংস্কৃতিক কারণ : পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা সাংস্কৃতিকভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল। রবীন্দ্র চর্চার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চেয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতির উপর চরম বৈষম্য ও রাজনৈতিক নিপীড়ন শুরু করে। বাঙালি জাতিকে দমনের জন্য বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে। বৈষম্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।