অথবা, বাংলাদেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।
উত্তর ভূমিকা : প্রত্যেকটি সমাজেরই একটা নির্দিষ্ট কাঠামো বা Structure থাকে, যার উপর ভিত্তি করেই সমাজ তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে। এদিক থেকে বলা যায়, কৃষক সমাজও এর ব্যতিক্রম নয়। অন্যান্য সমাজের মত কৃষক সমাজেরও একটা কাঠামো রয়েছে। এ কৃষক সমাজের কাঠামো হচ্ছে কৃষিভিত্তিক কাঠামো বা Agrarian structure এর একটা অংশ। তৎকালীন বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক সমাজ যেমন— আদিম সমাজ, শিকার সমাজ, সংগ্রহ সমাজে কৃষি কাঠামো বিদ্যমান ছিল। তবে ঐসব সমাজে কৃষি কাঠামো বর্তমান কৃষক সমাজের কৃষি কাঠামো থেকে আলাদা।
ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক : একটি দেশের সমাজব্যবস্থায় ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামো উভয়ই বিদ্যমান। এ দুটি ব্যবস্থার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। নিম্নে এ দু’য়ের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. যেসব আইনকানুন ও রীতিনীতি দ্বারা জমির মালিকানা এবং এর উপর কৃষকদের অধিকার ও ভোগদখল সংক্রান্ত স্বত্ব এবং খাজনা আদায় পদ্ধতি নির্ধারিত হয় তাকে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা বলে। সামাজিক শ্রেণি কাঠামো বলতে একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত কাঠামো ব্যবস্থাকে বুঝায়, যারা অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র এবং তদানুসারে সমাজের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত । শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ হয় জমির মালিকানা স্বত্বের উপর নির্ভর করে। গ্রামীণ সমাজ কাঠামোতে দেখা যায়, যার যত ভূমি বা জমি রয়েছে তার অবস্থান তত উপরে। তাছাড়া মান-মর্যাদা এমনকি নেতৃত্ব কাঠামো অনেকটা ঐ শ্রেণির উপর অধিকাংশে বর্তায়।
৩. গ্রামীণ সমাজ কাঠামোতে শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য করা যায় আর্থিক পরিস্থিতি বা সম্পত্তির অধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় স্তরবিন্যাস বা শ্রেণি সমন্বয় করা হয়। গ্রামের অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি এবং সম্পদ হচ্ছে ভূমি। কৃষক শ্রেণি হচ্ছে গ্রামের প্রধান উৎপাদক শ্রেণি। এ উৎপাদক শ্রেণির আর্থিক অবস্থা সকলের একরকম নয়। কারণ ভূমি মালিকানার উপর নির্ভর করে আর্থিক
সচ্ছলতা। ফলে গ্রাম সমাজে কৃষক উৎপাদক শ্রেণি হওয়া সত্ত্বেও ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে তাদেরকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।
৪. ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা কৃষি উন্নয়নের গতিধারা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। জমির মালিকানা, অধিকার ও ভোগদখল এবং খাজনা আদায় সংক্রান্ত বিষয়সমূহ একটি দেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষির উন্নতির জন্য সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা একান্ত অপরিহার্য। আবার কৃষি উন্নয়ন কৃষক শ্রেণির হাত ধরেই সংঘটিত হয়। তাই ভূমিস্বত্বের পাশাপাশি শ্রেণি কাঠামোরও উন্নয়ন আবশ্যক।
৫. একটি সুষ্ঠু ও প্রগতিশীল ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা যেমন কৃষির উন্নতিতে সহায়তা করে, তেমনি অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। আবার দেখা
যায় যে, শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা বা ভূমি মালিকানার সুষ্ঠু বণ্টন না হওয়ার ফলে উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত হয় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কৃষি কাঠামোতে শ্রেণি কাঠামো ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। একটি সমাজব্যবস্থায় শ্রেণি কাঠামো যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাও অবম্ভাবী। এ দুটি কাঠামো একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং এ দু’য়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।