বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতিগুলো কী কী? আলোচনা কর। উত্তর ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞান আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে সমাজ। আর এ সমাজ গড়ে উঠে মানুষ নিয়ে।
প্রত্যেকটি সমাজের মানুষের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর কারণ তার ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, সামাজিক রীতি-নীতি, ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টি কালচার। সেক্ষেত্রে পৃথক জাতিসত্তা ও অন্যান্য পৃথক উপাদানের কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এসব বৈশিষ্ট্য দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার সমস্যার প্রকৃতি : নিচে বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমস্যার প্রকৃতি উল্লেখ করা হলো :
১. জনসংখ্যার অতিঘনত্ব : বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ২০০১ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কি.মি. ৮৩৪ জন। ২০১১ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯৬৪ জন প্রতি বর্গ কি.মি.।[[২. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের জনসংখ্যার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো-এর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১১.১৪ কোটি, ২০০১ সালে হয় ১২.৯২ কোটি এবং ২০১১ সালে হয় প্রায় ১৫ কোটি । অর্থাৎ জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে ।
৩. উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : বাংলাদেশের জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, ১৯০১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ০.৯০%। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৪%।
৪. জনসংখ্যার বিশালত্ব : জনসংখ্যার বিশালত্ব বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের মোট আয়তন মাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি. । কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। ৫. উচ্চ জন্মহার ও মৃত্যুহার : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি।
গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু, শিশু মৃত্যু, রোগ, শোকজনিত মৃত্যু, অপুষ্টিজনিত কারণে এদেশে উচ্চ মৃত্যুহার পরিলক্ষিত হয়।
আবার বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের কারণে এদেশে উচ্চ মৃত্যুহার পরিলক্ষিত হয়। বাল্যবিবাহ বহুবিবাহের কারণে উচ্চ জন্মহার পরিলক্ষিত হয়।
৬. অশিক্ষিত জনসংখ্যা : বাংলাদেশের জনসংখ্যার অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো ব্যাপক নিরক্ষরতা। এদেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। দারিদ্র্যই এর মূল কারণ। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার হার ৬২%। অশিক্ষা ও নিরক্ষরতার দরুন দেশের জনগণ অদৃষ্টবাদী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন।
৭. পরনির্ভরশীলতা : বাংলাদেশে জনসংখ্যার আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের পরনির্ভরশীলতা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও বৃদ্ধ। এক হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ৪৬.৭% এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ৫.৬%। এ বয়সের লোকজন কর্মক্ষম নয়। তারা অন্যের আয়ের উপর
নির্ভরশীল। পক্ষান্তরে ১৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা দেশে, ৪৭.৭%। ফলে দেশে শ্রমশক্তির যোগান কম হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনায় বলা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য মানব সম্পদ উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্যই বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নত ও দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারেনি।